কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এছাড়াও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে সঙ্কোষ, গঙ্গাধর, ব্রহ্মপুত্রসহ সবকটি নদণ্ডনদীর। পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে উপজেলার প্রায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উপরে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে দুধকুমার নদের বামনডাঙ্গা মুড়িয়াঘাট এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি এলাকা। তলিয়ে গেছে পুকুর, নষ্ট হয়েছে বীজতলা, পাটসহ বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষেত। এছাড়াও শিশু বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে বন্যা কবলিতরা। স্থানীয়রা জানান প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুম আসলেই বন্যার কবলে পড়ে নাগেশ্বরীর বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে ওই ইউনিয়নের তেলিয়ানিরকুটি, মালিয়ানীটারী, আদর্শপাড়া, বড়মানী, বন্ধুবাজার, মুড়িয়া, পানাতিটারী, পাটেশ্বরী, নাগেশ্বরী পৌরসভার সেনপাড়া, পূর্ব সাঞ্জুয়ারভিটা, পানাতিটারী, ধনীটারী, অন্তাইরপাড়, বোয়ালের ডাড়া, নুনখাওয়া ইউনিয়নের চর কপনা, ব্যাপারীরচর, রায়গঞ্জ ইউনিয়নের ফন্দেরচর, বড়বাড়ী, কাশেম বাজারসহ বহু গ্রাম প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এতে করে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট। চুলায় আগুন জ্বালাতে না পেরে অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে বানভাসীদের। বাড়িতে পানি ওঠায় অনেকে আশ্রয় নিচ্ছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় বাজার ও সড়কসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে। বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়া এলাকার এলাকার আবদুস ছাত্তার, আনিছুর রহমান, ধনীটারীর মাইদুল ইসলাম, সাইফুর রহমান জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে অনেক বাড়ি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেক বীজতলা তলিয়ে গেছে। শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদী পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন তারা। মকবুল হোসেন জানায় অনেকের পুকুর ডুবে গিয়ে মাছ বের হয়ে গেছে ফলে মাচ চাষিরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছে। পানিবন্দী এক কৃষক জানায় তাদের বাড়ির চারপাশে পানি থাকার কারণে তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। এছাড়াও হাটবাজার করা, বাইরে বের হওয়া নিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার পানিবন্দী পরিবারগুলো। তবে সময়মতো বাঁধ নিয়ন্ত্রণের কাজ না করাকেও দুষছেন স্থানীয়রা।
বানডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি জানান, তার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। ওইসব এলাকার বীজতলা, পাটসহ অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও এসব এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি তাদের পাশে থাকার। গতকাল (শুক্রবার) আমাদের এমপি ও ইউএনও মহোদয় এবং বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শন করে এই ইউনিয়নের ৩শ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছেন।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ সাদাত, আমরা নিয়মিত বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শনকরে খোঁজ খবর রাখছি। আমাদের যথেষ্ঠ ত্রাণের ব্যবস্থা আছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণ সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করে আসছি। যেকোন সময় কোনো সমস্যা হলে আমরা তা মোকাবেলা করতে পারব এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে থাকব। এ পর্যন্ত এ উপজেলায় বন্যা কবলিতদের জন্য ১৬ মেট্রিকটন চাল ও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।