খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার মানুষ তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়েছে। তাদের এ মুহূর্তে দাবী দেয়াড়া-দৌলতপুর খেয়াঘাটের পশ্চিম পার বাজারের ভেতরের চিপা গলি থেকে স্থানান্তর করে সাবেক লঞ্চঘাটে স্থাপন করা। দিঘলিয়ার মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি আশীর্বাদ ভৈরব নদীকে তাদের দৈনন্দিন জীবনে অভিশাপ হিসেবে দেখতে চায় না।
দিঘলিয়ার বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, দেয়াড়া-দৌলতপুর খেয়াঘাট দিয়ে ভৈরব নদী পার হতে গিয়ে দিঘলিয়ার আপামোর জনতার দুর্ভোগের অন্ত নেই। এ জনপদের মানুষ এ খেয়াঘাট পার হতে গিয়ে জীবন দিয়েছে, হাত-পা ভেঙ্গেছে, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও মালামাল নিয়ে নদীতে পড়েছে বহুবার। তাই দিঘলিয়ার মানুষ ধরেই নিয়েছে দুর্ভোগের অপর নাম দৌলতপুর খেয়াঘাট।
দিঘলিয়া উপজেলাসহ দৌলতপুর, কালিয়া ও তেরোখাদার হাজার হাজার মানুষ নানা রকম মালামাল নিয়ে যুগ যুগ ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভৈরব নদী পারাপার হয়। দৈনন্দিন এ ঘাট পার হয়ে খুলনা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে দিঘলিয়া, দৌলতপুর এলাকার হাজার হাজার মানুষ। খুলনার তৃতীয় বৃহত্তম ও ব্যস্ততম এ ঘাটটি সংস্কারের ও স্থানান্তরের দাবী বারবার জানালেও দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পায়নি এ জনপদের মানুষ। উল্টো ইজারাদারদের টোল আদায়ে নিয়োজিত লোকদের নানা দুর্ব্যবহার ও কটু বাক্যের শিকার হচ্ছেন স্কুল-কলেজসহ নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষদের। দেয়াড়া-দৌলতপুর খেয়াঘাটের এই দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার নিমিত্তে এ জনপদের নিত্য দিনের দুর্ভাগা মানুষ আজ সোচ্চার হচ্ছে। আজ তারা আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের কথা ভাবছেন।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানগেছে, একাধিক নদী দ্বারা বেষ্টিত, বিভক্ত ও খুলনা শহর থেকে ভৈরব নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই দিঘলিয়া উপজেলা। সরাসরি সড়ক যোগাযোগহীন এ উপজেলাটি। মোট ৬টা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলাটি। আড়ংঘাটা ও যোগীপোল এ দুটো ইউনিয়ন খুলনা শহরাংশে অবস্থিত। বারাকপুর, দিঘলিয়া ও সেনহাটি এ তিনটি ইউনিয়ন ভৈরব, আতাই ও মজুদখালী নদী দ্বারা ঘেরা একটা দ্বীপ। গাজীর হাট ইউনিয়নটি আতাই নদীর পূর্ব পাড়ে ও তেরোখাদা এবং কালিয়া উপজেলার মাঝখানে অবস্থিত। ৩টি নদী দ্বারা ঘেরা দ্বীপাঞ্চল এ তিনটি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এখানকার বাসিন্দাদের উপজেলার বাইরে শহরে কিংবা অন্য কোন এলাকায় যেতে হলে খেয়া পারাপারের কোন বিকল্প নেই। লক্ষাধিক মানুষের পারাপারের জন্য দ্বীঘল দ্বীপে রয়েছে ১১ টি খেয়াঘাট। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেয়াঘাট হচ্ছে দৌলতপুর খেয়াঘাট। অবস্থানগত কারণে এ খেয়াঘাটটির গুরুত্ব অপরিসীম। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ শহরের সঙ্গে দ্রুত ও সহজ যোগাযোগের ক্ষেত্রে পারাপারের জন্য এ ঘাটটি বেছে নেয়। প্রতিদিন চার সহ¯্রাতিক মানুষ ঘাটটি দিয়ে পারাপার হয়। খুলনা জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাটটি থেকে ইজারার মাধ্যমে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। এ ঘাটটির জন ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব এত বেশী হওয়ার পরও যাত্রী পারাপারের ক্ষেত্রে সুবিধা বরাবরই উপেক্ষিত। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, খেয়াঘাটের যাত্রী উঠা নামার জন্য দুই প্রান্তের সিঁড়ি নদীতে ডেবে যাওয়ায় বিশেষ করে দেয়াড়া অংশের সিঁড়ির শেষ প্রান্তে ফাটল ধরায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভাটার সময় দুর্ভোগ দ্বিগুণ আকার ধারণ করে। দৌলতপুর খেয়াঘাটের চিপা গলির অর্ধেকাংশ দখল করে আছে ইজারাদারদের টোল আদায়ের চেয়ার টেবিল। বাকি অংশ দিয়ে অসহায়, মারাতœক অসুস্থ রোগী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, বিকলাঙ্গ, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু ও নারী-পুরুষ ধাক্কাধাক্কি করে বের হওয়ার পর দৌলতপুর বাজারের কাপড় পট্টির দীর্ঘ চিপা গলি অতিক্রম করে মূল সড়কে উঠতে হয়। বিশেষ করে যুব মহিলা ও স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রীদের নানা সমস্যার সন্মুখিন হতে হয়। কাপড়ের পট্টির চিপা গলি দিয়ে যানবাহন বিশেষ করে রিক্সা, ভ্যান, অটো চলাচলের কোন সুযোগ না থাকায় উপরোল্লেখিত লোকজনদের নিয়ে চিপা গলির ভেতর দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে সড়কে পৌঁছাতে হয়। এ ছাড়া প্রবাসী, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত যাত্রীদের সাথে থাকা ভারী ব্যাগ, লাগেজ বা বিভিন্ন ধরণের মালামাল নিয়ে কাপড় পট্টির সরু গলি দিয়ে খেয়াঘাটে আসতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঈদ ও পূজার সময় কাপড় পট্টির গলিতে ক্রেতাদের ভিড়ে খেয়াপারের যাত্রীদের করুন অবস্থার সৃষ্টি হয়।
দিঘলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ঘাট সংশ্লিষ্টদের অব্যবস্থাপনা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে যুগ যুগ ধরে এ জনপদসহ পূর্বাঞ্চলের উপজেলাগুলোর হাজার হাজার সাধারণ মানুষসহ খেয়াঘাটটি দিয়ে পারাপাররত যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দৌলতপুর খেয়া ঘাটের পার্শ্ববর্তী বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ন্ত্রণাধীন একটি লঞ্চঘাট রয়েছে যেটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই লঞ্চঘাটে দৌলতপুর খেয়াঘাটটি স্থানান্তর করা হলে জনদুর্ভোগ থেকে এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের রক্ষা মিলতো।
এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি, খেয়াঘাটতি লঞ্চঘাটে স্থানান্তরিত হলে ঘাট পার হয়ে প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে মূল সড়কে যেতে সময় লাগবে মাত্র ২০-২৫ সেকেন্ড। ফরমাইজখানা ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত মন্ডল জুট টেক্সটাইল মিলস লিঃ ‘র কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পারাপারের জন্য বিআইডব্লিউটিএ এর অনুমোদন নিয়ে মিল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে দৌলতপুর খেয়াঘাট সংলগ্ন স্টিমার/লঞ্চঘাটে জেঁটি নির্মাণ করেছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে লঞ্চ ঘাটটি ব্যবহারের অনুমতি নেওয়া উচিত।
যাত্রীরা বলেছেন, রাত ১১ টার পর পারাপারের গুরুত্বপূর্ণ এ খেয়া ঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়না। তাই এ দাবির সমর্থনে রোববার (১৬ জুলাই) সকাল ৯ টায় দৌলতপুর খেয়াঘাটের পূর্ব প্রান্ত দিঘলিয়ার দেয়াড়া খেয়া ঘাটে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের সূচনা করা হবে এমনটিই জানিয়েছে দিঘলিয়ার সচেতন নাগরিক সমাজ।