চাচা-ভাতিজাসহ সৌদি প্রবাসী বাগমারার চারজন কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা গেছে। সৌদি আরবে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া নয়জনের মধ্যে চারজনেরই বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। এর মধ্যে একজনের বাড়ি উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নে এবং অপর তিন জনের বাড়ি যোগিপাড়া ইউনিয়নে। অগ্নিদগ্ধে নিহতরা হলেন হলেন ঝিকরা ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের জফির উদ্দিন শেখ এর ছেলে রুবেল হোসাইন শেখ (২৬), যোগীপাড়া ইউনিয়নের বারুইহাটী গ্রামের জমির উদ্দিনের ছেলে সাজেদুল ইসলাম (৪৫) ও তার ভাতিজা একই গ্রামের সাহাদাত হোসেন প্রামানিক এর ছেলে আরিফুল ইসলাম (রুবেল আলী) (২৭) ও বড় মাধাইমুড়ি গ্রামের আনিছার রহমান সরদার এর ছেলে ফিরোজ আলী সরদার (৩৯)। তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শুক্রবার সৌদি সময় বিকেল চারটায় রাজধানী রিয়াদ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার পূর্বে আল আহসা শহরের হুফুফ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকার এক সোফা তৈরির কারখানায় অগ্নিকা-ের এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রুবেল হোসাইন শেখ এর ভাই জাবের আলী শেখ এমন দুর্ঘটনা মানতেই পারছেন না। তিনি বলেন, শুক্রবার তাঁরা মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন। তবে নিশ্চিত হতে পারেননি। আজ সকালে সেখানে থেকে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সাজেদুল ইসলাম এর স্ত্রী রিপা বিবি জানান, তার স্বামী ২০১৬ সালে সৌদি আরবে গেছেন। তার সপ্তম শ্রেনীতে পড়-য়া মেয়ে সাদিয়া বাবার মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিকে হারিয়ে হতবাক হয়ে পড়েছেন তারা।
এদিকে উপজেলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের বড় মাধাইমুড়ি গ্রামের ফিরোজ আলী সরদার (৩৯) ছয় বছর আগে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। বাবা আনিছার রহমান সরদার বলেন, ছেলে কিছু টাকা জমিয়ে এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। এর আগে অন্য কারখানায় চাকরী করতেন ফিরোজ আলী। নতুন কারখানায় শুক্রবারই প্রথম কাজে যোগদান করেন। যোগদানের প্রথম দিনেই ছেলের মৃত্যুর খবরে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। তার ফিহা নামের নয় বছরের এক মেয়ে ও হামিম নামের তিন বছরের এক ছেলে রয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ছেলেটি খুবই ভদ্র ছিল। এদিকে আরিফুল ইসলাম (রুবেল) এর পিতা সাহাদাত হোসেন প্রামানিক জানান, তার ছেলে এখনো অবিবাহিত। অনেক স্বপ্ন নিয়ে সে বিদেশে যায়। তার মৃত্যুর খবরে সকলের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেলো। অগ্নিকা-ে বাগমারার এসব নিহত পরিবারবর্গের সঙ্গে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে খবর পাওয়ার পর রাজশাহী জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বাগমারা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারি কমিশনার (ভুমি) সুমন চৌধুরী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজিব আল রানা নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে যান। তাঁদের খোঁজ খবর নেওয়া ছাড়াও সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরী জানান, নিহতদের পরিবার প্রতি প্রাথমিক সহযোগিতা হিসাবে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরো সহযোগিতা করা হবে। প্রত্যেক পরিবারের সাথে কথা বলা হয়েছে।
এছাড়াও এ দূর্ঘটনার খবর পেয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামিম আহম্মেদ শোকার্ত পরিবারের কাছে ছুটে যান। তিনি নিহত পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং মরদেহ অতিদ্রুত দেশে আনার ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।