তিন দফা দাবিতে আগামী ১ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিবহন বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে রংপুর বিভাগের পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্টিবিউটরস, এজেন্টস এন্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন। সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সোহরাব টিটু।
দাবি তিনটি হলো- ১. জ্বালানি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকলরীর ইকোনমিক লাইফ ৫০ বছর করতে হবে। ২. জ্বালানী তেল (ডিজেল, পেট্রোল/অকটেন) বিক্রয়ের উপর প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে ৭.৫ শতাংশ করতে হবে। ৩. জ্বালানী তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট বিধায় প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সুস্পষ্ট গেজেট প্রকাশ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সোহরাব টিটু বলেন, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা হরতাল, অবরোধ, জরুরি অবস্থা, অসহযোগ আন্দোলন ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্যাংকলরীর মাধ্যমে তেল পরিবহনপূর্বক নিরবিচ্ছিন্নভাবে তেল সরবরাহের মাধ্যমে যোগাযোগ ও কৃষি উৎপাদনে দীর্ঘদিন যাবত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ছাড়া করোনাকালীন সময়ে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে নিরবিচ্ছিন্নভাবে তেল সরবরাহ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখায় খাদ্য উৎপাদন উল্লেখ্যযোগ্য হারে বেড়েছিল।
তিনি আরও বলেন, একমাত্র জ্বালানি তেল ক্রয় এবং বিক্রয় সরকার নির্ধারিত অভিন্ন মূল্যে হয়ে থাকে। জ্বালানি তেল বিক্রয়ের উপর সরকার নির্ধারিত হারে কমিশন প্রদান করে থাকে। ফলে ফিলিং স্টেশনের আয় বৃদ্ধির কোন সুযোগ নেই। জ্বালানি ব্যবসায়ীরা সরকারি নির্ধারিত মূল্যে জ্বালানি তেল ক্রয়পূর্বক সরকারি নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করে স্বল্প কমিশন পেয়ে থাকে। ফলে জ্বালানি ব্যবসায়ীরা শতভাগ কমিশন এজেন্ট। তাই জ্বালানি তেল বিপণন কাজে নিয়োজিতদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকল্পে গেজেটের মাধ্যমে জ্বালানি ব্যবসায়ীদের অবস্থান/মর্যাদা কমিশন এজেন্ট ঘোঘণার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ক্ষেত্রে দ্বৈত লাইসেন্সসহ বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব। এটা হলে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর কর্তৃক ফিলিং স্টেশন সংক্রান্ত এসআরও এককভাব জারির প্রবণতা হ্রাস পাবে। এন্ডসংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব বিপিসি বা জ্বালানী কোম্পানি বহন করবে।
মোস্তফা সোহরাব টিটু বলেন, জ্বালানি তেল বিক্রয়ের উপর ডিলার্স কমিশন বৃদ্ধির দাবি জ্বালানি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি-সংশ্লিষ্টজন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি বারবার দিলেও তা এখনও বাস্তবায়ন করা হয় নাই। জ্বালানি তেলের মূল্য যখন ৬০ টাকা ছিল তখন যে হারে কমিশন প্রদান করা হতো এখন তেলের মূল্য দ্বিগুণ হওয়ার পরও প্রায় একই হারে কমিশন প্রদান করছে। অথচ তেল ক্রয়ে ডিলার/এজেন্টেদের দ্বিগুণ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে, একইসাথে জিনিসপত্রের মূল্যে ঊর্ধ্বগতির ফলে কর্মচারীর বেতন অনেকাংশে বৃদ্ধি করতে হয়েছে। সকল লাইসেন্স ফি প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিসহ ট্যাংকলরীর পার্টস এর মূল্যও দ্বিগুণ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেখানে অটোগ্যাস স্টেশন (এলপিজি) প্রতি লিটার ৪৬.৫০ টাকা করে বিক্রয় করে আট টাকা কমিশন পাঁচ্ছে, সেখানে প্রতি লিটার অকটেন ১৩০ টাকা, পেট্রোল ১২৫ টাকা ও ডিজেল ১০৯ টাকা বিক্রয় করে আমাদের কমিশন দেওয়া হচ্ছে চার টাকা আর ৪৬.৫০ টাকা এক লিটার এলপিজি বিক্রয়ে ১৭ শতাংশ কমিশন দেওয়া হয়। অন্যদিকে প্রতি লিটার অকটেন ১৩০ টাকা, পেট্রোল ১২৫ টাকা ও ডিজেল ১০৯ টাকা বিক্রয়ে ৩ শতাংশ কমিশন দেওয়া হয় এবং যা দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় অবস্থান করছে।
এছাড়াও তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পর থেকে তেল বিক্রয় অর্ধেকে নেমে গেছে। ফলে আয়ও কমে গেছে কারণ বিক্রয়ের উপরই আমাদের কমিশন নির্ভরশীল। জ্বালানি ব্যবসায়ীরা আশাহত হয়ে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন। দীর্ঘদিনের পূঞ্জীভূত এ সমস্যা ও সংকটের আর্বত হতে বের হয়ে আসার জন্য জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাস/বৃদ্ধির সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট স্থায়ী ফয়সালার জন্য জ্বালানি তেল বিক্রয়ের উপর ডিলার্স কমিশন ৭.৫ শতাংশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- অ্যাসোসিয়েশনের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আজিজুল ইসলাম মিন্টু, দিনাজপুরের সভাপতি রফিকুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এটিএম হাবিবুর রহমান, বিভাগীয় দপ্তর সম্পাদক হারুন অর রশিদ, রংপুরের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজ শহীদ শোভন, রংপুর মটর মালিক সমিতির সভাপতি এ কে এম মোজাম্মেল হক প্রমুখ।