রাজশাহীর তানোরে বিবাদমান বিএনপির দু’গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় গুপ্ত হামলা ও মারামারির ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষসহ উত্তেজনার পাশাপাশি আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দলের কঠিন সময়ে নিজেদের মধ্যে এমন হামলা নিয়ে চরম বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা। এনিয়ে তানোর উপজেলা বিএনপি'র দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একই দিনে দু'গ্রুপ পৃথক ভাবে সভা আহবান করে উত্তেজিত করে ফেলছে রাজনীতির মাঠ।
এ দুই গ্রুপের শীর্ষ নেতাদের বহিস্কার করে নতুন ভাবে কমিটি দিয়ে সকলকে এক কাতারে আনার দাবি স্থানীয় পর্যায়ের সিনিয়র নেতা-কর্মিসহ সমর্থকরা। এসব দ্বন্দের ফলে দিনের দিন সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ছে দলটি।
কেউ কাউকে মানতে নারাজ ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে আমাগী জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেই গেছে বিএনপি। এই মনোভাব নিয়ে দু'গ্রুপের মধ্যে শুরু হয়েছে কামড়া কামড়িসহ নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে গুপ্ত হামলা ও মারামারি।
স্থানীয় পর্যায়ের সিনিয়র বিএনপির দলীয় নেতা-কর্মি ও সমর্থকদের সাথে কথা জানা গেছে, তানোরে বিএনপির দু'গ্রুপের নেত্বীত্বের মুল ভুমিকায় এক গ্রুপে রয়েছেন তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক তানোর পৌর সভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিজান।
অপর গ্রুপে তানোর উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব তানোর উপজেলা ছাত্রদল সাবেক সভাপতি আবদুল মালেক মন্ডল। মুলত এই দুজনই দু'গ্রুপের নেত্বীত্ব দিচ্ছেন। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর সভায় একজন আরেক জনের অনুসারীদের সমন্নয়ে কমিটি গঠন করছেন।
গত শুক্রবার কামারগাঁ ইউনিয়ন বিএনপি'র দু'গ্রুপ কামারগাঁ বাজারের একই স্থানে পাল্টাপাল্টি সভা আহবান করে। এনিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হলে মারামারির আশংকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে দু'গ্রুপের কাউকেই সভা করতে দেয়নি।
কামারগাঁ ইউপিতে বিএনটির দুই গ্রুপের দুটি কমিটি রয়েছে একাংশের সভাপতি খলিলুর রহমান আরেক অংশের সভাপতি প্রভাষক জাহিদুর রহমান। খলিল গ্রুপকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন কৃষক দলের সদস্য সচিব মালেক মন্ডল। অপর দিকে জাহিদ গ্রুপকে সমর্থন দিচ্ছেন সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিজান।
গত ১লা জুলাই বিকালে মুন্ডুমালা পৌর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অবশরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সামরিক সচিব রাজশাহী-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শরিফ উদ্দিন।
সেখানে মালেক গ্রুপ অংশ নিলেও মিজান সেখানে অংশ না নিয়ে ওইদিনই বিকালেই দেবিপুর মোড়ে তালন্দ ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী সভা করেন মিজান গ্রুপ এবং প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান।
মুন্ডুমালা সভা শেষ করে অবশরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিন তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক মফিজ উদ্দিন ও মালেকসহ নেতা-কর্মিদের নিয়ে তানোর পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক অসুস্থ আবদুস সালামকে দেখতে তার নিজ বাড়ি গাইন পাড়াতে আসেন।
খবর পেয়ে মিজান গ্রুপের নেতা-কর্মিরা মুখে কাপড় বেধে সেখানে গিয়ে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাদের লাঞ্ছিত করেন। এরই জের ধরে সম্প্রতি ওয়ার্ড যুবদল নেতা জুবায়েরকে আমশো গ্রামে একাই পেয়ে মালেকের লোকজন তার দিয়ে বেধড়ক পেটায়।
এছাড়াও ১লা জুলাই সাবেক মেয়র মিজান ঘোষনা দিয়েছিলেন ৮ জুলাই ডাকবাংলো মাঠে সাত ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভা মিলে উপজেলা বিএনপির আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী হবে, সেখানেই ঘোষনা হবে তানোর বিএনপি কার নেতৃত্বে চলবে।
কিন্তু দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নেয়ার কারণে ঘোষিত ওই দিনে ঈদ পুনর্মিলনী হয়নি। কামারগাঁ ইউপি কৃষকদলের সভাপতি ইউসুফ বলেন, মেজর সাহেবের সাথে আমরা অসুস্থ এক নেতাকে দেখতে গেছিলাম আর সেখানে মুখে কাপড় বেধে মিজানের লোকজন হামলা ও মারপিট করেন।
তিনি বলেন, মাস্তানি করে নেতা হওয়া যায়না। সে ২০১৬ সালে প্রয়াত এমরান মোল্লা ছিল বলে ১৩ ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। তাহলে বুঝতে হবে দাঙ্গা হাঙ্গামা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করা যায় না।
আমরা সদরে যে কোন সভায় গেলে তার কিছু ব্যক্তিগত ক্যাডার বাহিনী দ্বারা লাঞ্চিত করেন। মিজানের বাড়ি সদরে সে আমাদেরকে আগলে রাখবে। তা না করে আধিপত্য বিস্তার ও ক্যাডার বাহিনী তৈরি করে এসমস্ত ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন যা দলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
কৃষকদলের সদস্য সচিব মালেক মন্ডল বলেন, গত ৮ জুলাই অসুস্থ নেতাকে দেখতে যাওয়ার কারণে যদি মিজানের লোকজন মারপিট হামলা করে এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে। কারণ সেখানে অবশরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিন ছিলেন।
তাকে নিয়ে আজেবাজে কথাবার্তা বলেন এবং মিজানের কর্মচারী জুবাসহ কয়েকজন মুখে কাপড় বেধে সিনিয়র নেতাদের মারপিট করে। আমার তো মনে হয় ক্ষমতাসীন দলের এজেন্ড বাস্তবায়নে তারা বিটিম হয়ে কাজ করছে।
কারন এখন দলের কঠিন সময়, এখন কেন এসব ঘটনা ঘটবে। আমশোর দিকে জুবা মিজানের ডিস লাইনের কাজ করছিল এ সময় তাকে কিছু ছেলেরা মারে, আমি দেখতে পেয়ে থামিয়ে তাকে সরিয়ে দিই। সবাইকে নিয়ে বসে এসব দ্বন্দ্ব নিরোসান না হলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে বলে মনে করেন তিনি।
তানোর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখেরুজ্জামান হান্নানের ব্যক্তিগত মোবাইলে যোগাযোগ করে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি, এখন রাজশাহী মিটিংয়ে আছি পরে কথা বলা যাবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিজানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব আমাদের নিজেদের মধ্যে ঘটনা এসব বাদ দাও বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। পরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও আর রিসিভ করেন।