জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ এতিমখানার অস্বিত্ব কেবল সাইনবোর্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। অসংখ্য এতিমখানায় নেই এতিম শিশু, তবুও চলছে এতিমখানা।
ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে এতিমখানার নামে এতিমদের তালিকা করে দীর্ঘদিন থেকে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওইসব এতিমখানার পরিচালকদের বিরুদ্ধে। চিহ্নিত এসব এতিমখানার সীমাহীন অনিয়মের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকায় রয়েছেন। যেকারণে বছরের পর বছর ধরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের মহোৎসব চলে আসলেও তা বন্ধ হচ্ছেনা। ফলে এতিম শিশুদের জন্য সরকারের মহতি উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।
বুধবার সকালে সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের উপজেলা সমাজসেবা অফিসের তালিকানুযায়ী বাকেরগঞ্জে সরকারি বরাদ্দ রয়েছে ১৪টি এতিমখানায়। জানুয়ারি মাস থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ১৪টি এতিমখানার জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দের তালিকায় দেখা গেছে ২ কোটি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। সূত্রমতে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তালিকাভূক্ত এতিমখানাগুলোতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি বরাদ্দের টাকার চেক প্রদান করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়নের নারাঙ্গল নেছার মহল দারুস সুন্নাহ এতিমখানার তালিকা অনুযায়ী এবছর ২৬ জন এতিমের জন্য ছয় মাসের বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা। অথচ মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই এতিমখানায় কোন এতিম ছাত্র নেই। সাতজন শিক্ষার্থীকে এতিমখানায় পাওয়া গেলেও তাদের অধিকাংশর বাড়ি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ও খেপুপাড়া এলাকায়। তাদের সকলের বাবা ও মা জীবিত রয়েছেন।
ওইসব শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে মাসিক হারে বেতন আদায় করা হচ্ছে। অথচ প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের খাদ্য, পোশাক ও চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ওই এতিমখানার সাইনবোর্ড পর্যন্ত দেখা যায়নি। শুধু দক্ষিণ নারাঙ্গল নেছারমহল দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসার সামনে এতিমখানার নামে একটি পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একইভাবে চলছে উপজেলার চরাদী ছালেহিয়া এতিমখানা। ২০২৩ সালের সরকারি বরাদ্দের ওই এতিমখানার তালিকায় ২০ জন এতিমের নামে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। গত ১৮ জুলাই ওই এতিমখানায় গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ১১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদের সকলের বাবা ও মা বেঁচে আছেন। তারা প্রায় সবাই বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাহিরের বাসিন্দা।
এছাড়াও উপজেলার বড় রঘুনাথপুর মরহুম আবদুল আলী এতিমখানা, মোহাম্মদিয়া হামিদিয়া এতিমখানা, পারশিবপুর সাতঘর এতিমখানা, হাসিনা চৌধুরী এতিমখানা, পাটকাঠি নেছারিয়া এতিমখানা, দারুল আমিন এতিমখানার কর্মকান্ডও চলছে প্রায় একইভাবে।
এ ব্যাপারে বাকেরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হেমায়েত উদ্দিন বলেন, আমি গত তিন মাস হয় এ উপজেলায় এসেছি। বিষয়টি আমার ভাল জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে কোন ভূয়া প্রতিষ্ঠান পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তারপরেও অনিয়মের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকের তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে এতিমদের টাকা আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, কোন অবস্থাতেই সরকারের মহতি উদ্যোগকে ম্লান হতে দেওয়া হবেনা।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৫ মে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় “এতিমখানার নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুট” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয়ের তালিকা অনুযায়ী উপজেলায় ১৮টি এতিমখানা পরিদর্শন করেন তৎকালীন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। তিনি প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পেয়ে ওইসময় তালিকা থেকে চারটি এতিমখানায় সরকারি বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়াও বেশকিছু এতিমখানায় এতিম না থাকায় সরকারি বরাদ্দের ৩২ লাখ টাকা রাজস্বখাতে ফেরত পাঠিয়েছিলেন।