রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার ময়েনপুর মহল্লায় এক অসহায় আদিবাসীর ভোগদলীয় সম্পত্তি জবর-দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত ৯ জুলাই সুজন মুর্মু বাদি হয়ে আক্তারুজ্জামান টুটুলসহ ৪ জনকে বিবাদী করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এমন অভিযোগ তুলে নিতে সুজন মূর্মুকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন টুটুল। এতে জমি হারানোর পাশাপাশি প্রায় গৃহবন্দী হয়ে প্রায় ১০ দিন ধরে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সুজন পরিবার বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ময়েনপুর মহল্লার বাসিন্দা বিএনপি মতাদর্শী তরিকুল ইসলামের পুত্র আক্তারুজ্জামান টুটুল পেশি শক্তির জোরে এসব সম্পত্তি জবর-দখল করেছেন। সম্পত্তি ফেরাতে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সম্পত্তি ফেরাতে পারেনি আদিবাসী যুবক সুজন মুর্মু। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার যখন সমতল ভূমির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষকে স্বাবলম্বী করতে গবাদিপশু ও কৃষি উপকরণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন। তখন প্রকাশ্য লাঠির জোরে আদিবাসীর জমি দখলে সরকারের নেয়া কর্মসূচিকেই চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার জেল নম্বর ৭৪, মৌজা ময়েনপুর, খতিয়ান নম্বর- ১০১৫, দাগ নম্বর- ১৯০৫, হোল্ডিং নম্বর- ১০২৯, শ্রেণি ধানী, পরিমাণ ১৩ শতক। যাহার নাম জারি আবেদন নম্বর ৩৩৬৩৫১৪, তারিখ গেলো বছরের ১৪ জুন। নাম জারি মামলা নম্বর ৮২৯৭/২০২১-২২। ডিসি আর নম্বর- ৭০৫৬১/৫/(৪/৮/২২)।
পৈতৃক সূত্রে ওই সম্পত্তির মালিক ময়েনপুর আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দা মৃত ভিম মুর্মুর পুত্র সুজন মুর্মু। সুজন মুর্মু ওই সম্পত্তি বন্ধক দিয়েছিলেন ময়েনপুর মহল্লার মৃত তোফাজ্জুলের পুত্র সাহাবুলের কাছে। তখানো কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু সুজন যখন বন্ধকের টাকা পরিশোধ করে নিজেই চাষাবাদ শুরু করেন। তখন বিএনপির কর্মী টুটুল ওই সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে।
এনিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একাধিক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি জানান, টুটুল পরিবারের দাপটের কাছে পুরো আদিবাসীপল্লীর বাসিন্দারা জিম্মি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চলতি বছরের ২ মার্চ আক্তারুজ্জামান টুটুল চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে সুজন মূর্মুর ধানের চারা রোপণকৃত জমিতে মই দিয়ে পুনরায় চারা রোপণ করেছেন। এ সময় সুজন বাধা দিতে গেলে টুটুল চাইনিজ কুড়াল নিয়ে তাকে ধাওয়া করে। প্রতিবেশির বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে সুজন প্রাণে রক্ষা পায়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আক্তারুজ্জামান টুটুল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমানের নির্দেশনায় জমি চাষাবাদ করছেন। তিনি আরও বলেন, সুজন জাল করে জমির খারিজ খাজনা করেছেন।
এবিষয়ে সুজন মুর্মু বলেন, জমিতে গেলে তাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে টুটুল। এখন প্রশাসনও তার অভিযোগ আমলে নিচ্ছেন না বলে আক্ষেপ করেন সুজন মুর্মু।
এব্যাপারে মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি। তাই মেয়রের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেনের সরকারি মোবাইলে ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি।