চট্টগ্রাম: প্রায় ২৩২ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স এর ৮৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ২০১৫ সালের মার্চে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে মুসলিম হল সংস্কারের লক্ষ্যে নকশা প্রণয়ন কাজ শুরু হয়। ২০১৬ আগস্টে নকশা চূড়ান্ত করার পর ২০১৭ সালের নভেম্বরে একনেকে পাস হয়। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ‘চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স স্থাপন’ প্রকল্পটির মেয়াদ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ সাল পর্যন্ত ছিল। তবে করোনার কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটে। তাই প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। প্রকল্পের আওতায় ১৫২১২.২৮ বর্গফুট জায়গায় ১৫ তলা বিশিষ্ট ১টি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার, ১৪৪৯৩.২২ বর্গফুট আয়তনের ১টি মাল্টিপারপাস হল ও সেমিনার হলের পাশাপাশি ৭৪১৩.৬০ বর্গফুট আয়তনের জনসমাগম স্থান তৈরি করা হচ্ছে। এরইমধ্যে শেষ হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পুনঃসংস্কার কাজ। মূল সড়কের দুই পাশে যাতায়াতে তৈরি হয়েছে টানেল। গণগ্রন্থাগার ভবনের নিচতলায় থাকছে সার্ভিস সেকশন, যেখানে বই বাছাই, ফিউমিগেশন হবে। গ্রাউন্ড ও প্রথম ফ্লোরে থাকছে অফিস, ২য় ফ্লোরে সেমিনার ও মিটিং রুম, প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে তৃতীয় ফ্লোর। চতুর্থ ও পঞ্চম ফ্লোরে জেনারেল লাইব্রেরি, ষষ্ঠ ফ্লোরে চিলড্রেন লাইব্রেরি, সপ্তম ফ্লোরে পেপার লাইব্রেরি, অষ্টম ফ্লোরে রেফারেন্স লাইব্রেরি, নবম ও দশম ফ্লোরে সায়েন্স লাইব্রেরি, এগারোতম ফ্লোরে ট্রেনিং ইউনিট, বারোতম ফ্লোরে আইসিটি ইউনিট, তেরতম ফ্লোরে স্পেস ফর ফিউচার প্রোভিশন, চৌদ্দতম ফ্লোরে গেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হচ্ছে। গ্রন্থাগার অংশে সাধারণ পাঠাগারে ২৫০ জন, বিজ্ঞান পাঠাগারে ১৫০ জন, রেফারেন্স পাঠাগারে ১০০ জন, পত্রিকা/সাময়িকী পাঠাগারে ১০০ জন, প্রতিবন্ধী পাঠাগারে ৫০ জন, উন্মুক্ত পাঠাগারে ১৫০জন, শিশু-কিশোর পাঠাগারে ১০০ জন পাঠক একসঙ্গে বসে বই পড়তে পারবেন। এ ছাড়া ৪০ থেকে ৫০ আসন বিশিষ্ট সভাকক্ষ ও সেমিনার কক্ষ, ১৫০ আসন বিশিষ্ট একটি বড় সেমিনার কক্ষ নির্মাণ হবে। আইসিটি লাইব্রেরিতে থাকবে ৩০টি কম্পিউটার। থাকবে ১টি রেস্ট হাউজ, ২টি ভিআইপি কক্ষ ও সাধারণ ডরমেটরি কক্ষ। চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউটের মাল্টিপারপাস হলগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে এর পাশেই। প্রথম ও দ্বিতীয় ফ্লোরে সেমিনার ও এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল, তৃতীয় ফ্লোরে ক্যাফেটারিয়া ও প্রজেকশন হল, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় থাকবে মিলনায়তন। গ্রন্থাগারের পাশে চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। মুসলিম ইনস্টিটিউট অংশে ৭৫০ আসন বিশিষ্ট মিলনায়তন, ৩০০ থেকে ৩৫০ আসনবিশিষ্ট মিনি অডিটোরিয়াম থাকবে। এখানে ২০০ ও ১০০ আসন বিশিষ্ট দুটি সেমিনার কক্ষ, ১টি আর্ট গ্যালারি ও স্যুভেনির শপ থাকবে। সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে শহীদ মিনারের বেদির উচ্চতা ১১ ফুট বাড়ানো হয়েছে। পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ। এখানে সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি সভা, সেমিনার আয়োজনের সুযোগ থাকবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৪৫টি নতুন কর্মক্ষেত্র সৃজন করা হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকদের তথ্য চাহিদা পূরণ হবে। শিক্ষার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগরীর ঝিমিয়ে পড়া সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে প্রাণের সঞ্চার ঘটবে। গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ জানান, সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের শহীদ মিনার ও টানেলের অংশের কাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি মুসলিম ইনস্টিটিউটের প্রধান লাইব্রেরি ভবন ও মূল ভবনের কাজও প্রায় ৮৯ শতাংশ শেষ হয়েছে।