বগুড়ার গাবতলীতে মর্নিং ওয়ার্ক করার সময় ১৩ বছরের এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধি শিশুকে ফুসলিয়ে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ৬০ বছরের বৃদ্ধ বাবলু প্রাং নামের ব্যাক্তি জোরপুর্বক ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন ওই শিশুর বাবা মায়ের কাছ থেকে জোরপুর্বক ননজুজিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ধর্ষন ঘটনা ধামাচাপা ও আপস মিমাংসা করায় ধর্ষকসহ ৪ জনের নামে সোমবার রাতে থানায় শিশুর মা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।
পুলিশ সোমবার রাতে গাবতলী নেপালতলী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিশ্চিতপুর গ্রামের বদি মোল্লার ছেলে মোঃ মুন্নু মিয়া (৪০) ও একই ইউপির তেরপাখি গ্রামের টুকুর ছেলে আরিফ হোসেন (৪৫)কে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। ধর্ষক ৬০ বছরের বাবলু প্রাং গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকাল সাড়ে ৭ টায় নেপালতলী এলাকায়। ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ওই বুদ্ধি প্রতিবন্ধি শিশুকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গবতলী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সনাতন চন্দ্র সরকার জানান, নেপালতলী ইউনিনের নিশ্চিতপুর গ্রামের মামলার বাদীসহ তার ১৩ বছরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধি মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিন সকাল ৬ টায় রাস্তায় মর্নিং ওয়ার্ক (হাঁটতে) যান। বড় মেয়ের অসুস্থার সংবাদ পেয়ে বাদী বাড়িতে চলে আসে। ওই বুদ্ধি প্রতিবন্ধি শিশু একাই রাস্তায় হাঁটাকালে নেপালতলী বাসষ্ট্যান্ডে গাবতলী সারিয়াকান্দি সড়কের পাশে অবস্থিত মামলার এক নম্বর আসামি ৬০ বছরের বৃদ্ধ বাবলু প্রাং ওই বুদ্ধি প্রতিবন্ধি শিশুকে মুখ চেপে ধরে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। ঘরের দরজা বন্ধ করে জোরপুর্কক ১৩ বুদ্ধি প্রতিবন্ধি শিশুকে ধর্ষন করে। বাবলু প্রাং স্ত্রী ঢাকায় থাকায় বাড়িকে অন্য কেউ ছিলনা।
দীর্ঘক্ষন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি শিশু ঘরে না ফিরলে তার মা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। একপর্যায়ে মামলার স্বাক্ষীরা জানায়, ওই প্রতিবন্ধি শিশুকে বাবলু প্রাং তার বাড়িতে নিয়ে গেছে। বাদী বাবলু প্রাং বাড়ির গেটে পৌঁছামাত্র প্রতিবন্ধি শিশু কেঁদে বাড়ি থেকে বের হয়ে তার মাকে জানায় বাবলু দাদা আমাকে কোক (জুস) খাওয়ানোর কথা বলে ধর্ষন করেছে।
বাদী এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে আসার পথে ইউপি সদস্য মুন্নু মিয়া, আরিফসহ ৩ জন তাকে বাধা দেয় এবং বলে এঘটনা গ্রামেই মিমাংসা করবো। ইউপি সদস্য মুন্নু মিয়া বাদীকে হুমকি দেয় গ্রামের ঘটনা গ্রামেই মিাংসা করাহবে। যদি মিমাংসা না করিস, তাহলে তোদেরকে গ্রাম ছাড়া করবো, বাদী ভয়ে আর থানায় না আসেনি। ঘটনার দিনই ইউপি সদস্য মুন্নু মিয়া ও আরিফ বাড়িতে গিয়ে ভয় দেখায়। বাদী ও তার স্বামীর কাছ থেকে তিনশত টাকার ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে আপস মিমাংসার স্বাক্ষরনেয়। এঘটনা কাউকে বললে, বাড়াবাড়ি করলে বাদীর পরিবারকে গ্রাম ছাড়াসহ বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে।
গবতলী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সনাতন চন্দ্র সরকার বলেন, ধর্ষনের স্বীকার হওয়া প্রতিবন্ধি শিশুর মা বাদী হয়ে সোমবার রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। এতে ধর্ষক ৬০ বছরের বাবলু প্রাং, ভয়ভতি প্রর্দশন জোরপুর্বক ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে আপস করার অভিযোগে ইউপি সদস্য মুন্নু মিয়া, আলম আকন্দ ও আরিফ হোসেন আসামি করা হয়েছে। ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ওই বুদ্ধি প্রতিবন্ধি শিশুকে পাঠানো হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায় ধর্ষনের ঘটনা মিমাংসার করার জন্য ধর্ষক বাবলু প্রাং তার একটি ক্রোস গাভী গরু ছিল, মামলার আসামি আরিফের পিতা গরু ব্যবসায়ী টুকুর কাছে এক লক্ষ টাকায় বিক্রি করে। ওই টাকা ইউপি সদস্য মুন্নু মিয়া, আলম আকন্দ, আরিফ হোসেন ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। বাদীকে কোন টাকা দেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানায়, ধর্ষক বাবলু প্রাং ১লাখ টাকার গাভীটি টুকুর কাছ থেকে হাত বদল হয়ে, একলাখ ১৩ হাজার টাকায় ক্রয় করেন মামুন নামের শ্রমিকদলনেতা। তিনিও গাভীটি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন বলে এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।