কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না মানব পাঁচার বা পাঁচারকারীদের তৎপরতা। সর্বশেষ জানা যায়, নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার ১৩ যুবক দালালের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ায় গিয়ে ১৫ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। তারা প্রত্যেকে স্থানীয় দালালদের ৭ লাখ করে টাকা দিয়ে গত বছরের ২০ মার্চ লিবিয়ায় পাড়ি জমান। এর কিছুদিন পর ভালো বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে ইতালি পাঠানোর কথা বলে ওই যুবকদের অভিভাবকদের কাছ থেকে দ্বিতীয়বার টাকা আদায় করে দালালরা। এরপর তারা নতুন করে টাকা চাইলে এবং অভিভাবকরা তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে যুবকদের মারধরের ভিডিও পাঠিয়ে তাদের বিক্রি করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এখন বিদেশে তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ নিয়ে নেত্রকোনা মানব পাঁচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১০ লাখ মানুষ বিদেশ যান, যাদের মধ্যে অনেকেই পাঁচারকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে জোরপূর্বক শ্রম, যৌন শোষণ, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়েসহ আধুনিক দাসত্বের শিকার হচ্ছেন। মূলত দেশের বিভিন্ন এলাকার সহজ-সরল মানুষকে দালাল চক্রগুলো মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করার পর বিদেশে পাঁচার করে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রতারণা, নির্যাতন, অপহরণ ইত্যাদি যেন সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। মানব পাঁচার রোধে দেশে আইন রয়েছে। ২০১২ সালের ‘মানব পাঁচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে’ সংঘবদ্ধভাবে মানব পাঁচারের জন্য মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং অনূন্য পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ আইনে বিচারের জন্য ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, এরপরও অবৈধ মানব পাঁচার বন্ধ হচ্ছে না কেন? প্রথমত, কিছু মানুষের লোভ ও নির্বুদ্ধিতা এজন্য দায়ী। বিদেশ গমনেচ্ছুরা বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির বদলে অবৈধ দালাল চক্রের আশ্রয় নেওয়ায় এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এ ব্যাপারে সবার সচেতন ও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, মানব পাঁচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতারক দালাল চক্রগুলোর মূলোৎপাটন করতে হবে। দেশের কোনো নাগরিক যাতে পাঁচারের মতো দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির শিকার না হন, সেজন্য সরকারসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া এক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতার বিকল্প নেই। বিদেশগমনেচ্ছুরা দালালদের খপ্পরে যাতে না পড়ে সেজন্য পরিবারকেও সতর্ক থাকতে হবে।