ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে জামাল ইউনিয়ন পরিষদে শালিশ বৈঠকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘাত পরবর্তী সময়ে গোপালপুর গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি। লুটপাটের আশঙ্কা করছেন তারা। যে কারণে গ্রামবাসী বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দিনব্যপি বাড়ির আসবাবপত্র গরু,ছাগলসহ বিভিন্ন মালামাল অন্যত্র সরাতে শুরু করেছে। আহত পরিবার পরিজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। বুধবার রাতে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ গোপালপুর গ্রামের গফুর মোল্যার ছেলে নাসির মোল্যা ও একই গ্রামের মোস্তফা মন্ডলের ছেলে সুজন মন্ডলকে রাতেই গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের দুর্ঘটনা রক্ষা পেতে গোপালপুর গ্রামটিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
২৬ জুলাই বুধবার বিকালে জামাল ইউনিয়ন পরিষদে আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মারাত্বক ভাবে আহত হয়েছে ৭ জন। আহতরা হলেন,উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মসলেম মোল্লার ছেলে শওকত মোল্ল্য ও আলাউদ্দিন মোল্লা, একই গ্রামের হাসেম মন্ডলের ছেলে নজির মন্ডল ও সেলিম মন্ডল, গহর আলী ছেলে শাহজাহান, আকবার মোল্লার ছেলে সোহান মোল্লা, গফুর মোল্লার ছেলে আমিরুলসহ মোট ১৫ জন আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার গোপালপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কোন বাড়িতে পুরুষ মানুস নেই, গৃহবধু, মহিলা ও শিক্ষার্থীরা কেউ বাড়িতে নেই। চাকরিজিবিরা ও বুধবার রাতেই বাড়ি ছেড়ে চোলে গেছে। মালামাল নিয়ে যাওয়া ব্যাক্তিরা বলছেন, যে কোন সময় লুটপাট হতে পারে সে ভয়ে তারা বাড়ির মালামাল নিয়ে বিভিন্ন আত্মীয় বাড়িতে চোলে যাচ্ছে। কেউ কেউ কালীগঞ্জ শহরে বাসা ভাড়া নিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০ জুলাই রাতের মোটর সাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মসলেম মোল্ল্যার ছেলে বাবলু মোল্ল্যা ওরফে ঘেনা কে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাত্ব জখম করে স্থানীয় মালেক মোল্লার লোকজন। ওই ঘটনা বিষয়ে উভয় পক্ষকে উপজেলা জামাল ইউনিয়ন পরিষদে শালিশি বৈঠকের মাধ্যমে মিমাংশা করছিলেন জামাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ। বৈঠকে স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও এমপি উপস্থিত হওয়ার আগেই উভয় পক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এমপি সাহে যাওয়া আগেই চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন সালিসে কার্যক্রম শুরু করে এ সময় দু,পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংঘর্ষকারিরা পরিষদের চেয়ার টেবিল ভাংচুর করে। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমের কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে যশোর সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন মন্ডল বলেন, একটি মারামারির ঘটনা নিয়ে এলাকায় যাতে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে জন্য সালিস বৈঠক ডাকা হয়। সালিসে উভয় পক্ষের ৪ জন করে আসতে বলা হলেও দুই পক্ষই দল বেঁধে চলে আসে। সংসদ সদস্য আসার আগে কথাকাটির থেকে উভয় পক্ষ আবার সংঘর্ষে জড়ায়।কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহবুবুর রহমান জানান, জামাল ইউনিয়ন পরিষদের দুই গ্রুপের বিচার শালিস ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ঘটে। জনগনের নিরপত্তার বিষয়টিকে মাথায় রেখে গ্রামটিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের অবস্থান থাকবে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষই কালীগঞ্জ মামলা দায়ের করেছেন।