গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও ডেঙ্গু রোগীতে ভরা। তারই সাথে বরিশালের ঘরে ঘরে জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে এখন ডেঙ্গু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীদের নিয়ে তাদের স্বজনরা ছুটছেন বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসকদের কাছে। প্রথমেই চিকিৎসকরা রোগীর রক্তসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষার স্লিপ ধরিয়ে দিচ্ছেন। ওইসব পরীক্ষার স্লিপ ও রোগীদের নিয়ে স্বজনরা ছুটছেন চিকিৎসকদের পছন্দ করে দেয়া বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে ইচ্ছেমতো অর্থ আদায়ের মাধ্যমে এসব পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হচ্ছে। যেকারণে গত কয়েকদিন ধরে নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে।
পাশাপাশি জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্যারাসিটামল ও নাপা জাতীয় ওষুধ (ট্যাবলেট ও সিরাপ) এবং স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে এক শ্রেনীর অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। দামের তারতম্য নিয়ে হরহামেশাই রোগীর স্বজনদের সাথে ওষুধ বিক্রেতাদের বাগবিতন্ডা লেগেই রয়েছে।
জেলার গৌরনদী উপজেলার একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে বৃহস্পতিবার রাতে নাতনীকে নিয়ে ফিরছিলেন টরকীরচর এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুরানী। তিনি বলেন, গত চারদিন ধরে তার পাঁচ বছরের নাতনী প্রচন্ড জ্বরে ভুগছেন। প্রথমপর্যায়ে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে সেবন করানোর পরেও কোন সুফল মেলেনি। যেকারণে গৌরনদীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বরিশাল থেকে আসা এক চিকিৎসককে চারশ’ টাকা ভিজিট দিয়ে তার নাতনীকে দেখিয়েছেন। মঞ্জুরানী আরও বলেন, চিকিৎসক জ্বরের কথা শুনেই তার ছোট্ট নাতনীকে দুইটি টেস্ট দিয়ে ওই ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করাতে বলেন। তার কথা অনুযায়ী ১৪’শ টাকার বিনিময়ে দুটি পরীক্ষা করানোর পর রির্পোট দেখে চিকিৎসক বলেছেন, এটা ভাইরাস জ্বর। এরপর ওষুধের একটি ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেও অর্থসংকটের কারণে তিনি তা (ওষুধ) ক্রয় করতে পারেননি। মঞ্জুরানী বলেন, এখন বাড়িতে গিয়ে ধারদেনা করে টাকা এনে ওষুধ ক্রয় করতে হবে।
শুধু মঞ্জুরানী-ই নয়; এভাবেই প্রত্যেকটি জ্বরের রোগীদের চিকিৎসকেরা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিংবা প্যাথলজিতে পরীক্ষা করাতে পাঠিয়ে থাকেন। আর ওইসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিংবা প্যাথলজিতে গিয়েই প্রথম গলাকাটা ব্যবসার কাছে নিঃস্ব হতে হচ্ছে গ্রামের নিন্মআয়ের রোগী ও তাদের স্বজনদের।
নগরীর কয়েকটি ফার্মেসির মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভাগের সর্বত্র জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফলে প্যারাসিটামল ও নাপা জাতীয় ট্যাবলেট এবং সিরাপের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে। গ্লকোজ স্যালাইনেরও একই অবস্থা। তাই কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা চাহিদা অনুসারে ওষুধ দিচ্ছে না। অন্যদিকে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের দাবি, হঠাৎ করে প্যারাসিটামল ও স্যালাইন জাতীয় ওষুধের চাহিদা বেড়ে যাবে, তা আগে থেকে বুঝা যায়নি। এজন্য উৎপাদনে ও বাজারজাতকরণে বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে। খুব শীঘ্রই এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
একাধিক রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, ওষুধ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসীতে পূর্বের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন দামে প্যারাসিটামল ও নাপা জাতীয় ওষুধ, সিরাপ এবং স্যালাইন বিক্রি করা হচ্ছে। এনিয়ে প্রতিবাদ করলে ফার্মেসি মালিকরা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, ওষুধ নাই। তাই বাধ্য হয়েই রোগীর প্রাণ বাঁচাতে অধিকমূল্যে তারা এসব ওষুধ ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বরিশালের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, অতিরিক্ত মূল্যে ওষুধ বিক্রয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে।