নিজস্ব ভবন না থাকায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের কাজ হয় ভাড়া বাসায়। যমুনা নদীর বিভিন্ন চরে এসব জনবসতি হওয়ায় নির্বাচিত চেয়ারম্যানদেরও হয়রানি হতে হয় সেবা দিতে। বগুড়ার দুটি উপজেলায় ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন না থাকায় নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত প্রায় দুই লাখ মানুষ। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলার চারটি ইউনিয়ন।
নিজস্ব ভবন না থাকায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের কাজ হয় ভাড়া বাসায়। যমুনা নদীর বিভিন্ন চরে এসব জনবসতি হওয়ায় নির্বাচিত চেয়ারম্যানদেরও হয়রানি হতে হয় সেবা দিতে। অনেক চেয়ারম্যান একাধিক ভাড়া বাসা নিয়ে অফিস করে নাগরিক সুবিধা দিচ্ছেন। বয়স্ক ও বিধবাভাতাসহ প্রায় ২০ ধরনের সরকারি সেবা নিতে অন্তত ৫০ কিলোমিটার দূরে আসতে হয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে।সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা ইউনিয়ন পরিষদের কাজ চলছে কড়িতলা বাজারে একটি ভাড়া দোকান ঘর নিয়ে। প্রায় ১০ বছর আগে যমুনার ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে যাওয়া চন্দবাইশা ইউনিয়ন পরিষদের কোন ভবন নেই। তবে এ ইউনিয়নের নিজস্ব ভবন অনেকে দেখলেও বোহাইল, কর্ণিবাড়ি ও চালুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন দেখেননি এলাকার অনেক প্রবীনরা। এ চার ইউনিয়নের ১০৮টি গ্রামের মানুষের সেবা নিতে ভোগান্তি পোহাতে হয় পদে পদে। এ উপজেলার কাজলা ইউনিয়ন পরিষদেরও নিজস্ব কোন ভবন ছিল না গত দুই দশক ধরে। গত ২০২২ সালে একটি ভবন হওয়ায় সেবা নিতে পেরে খুশি এলাকার মানুষ। প্রায় ১০ কিলোমিটার চর থেকে আসা মোঃ আলমগীর হোসেন কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের নাগরিক সেবা নিতে আসে উপজেলার মথুরাপাড়া বাজারে। সেখানে একটি ঘর ভাড়া করে চলে পরিষদের কার্যক্রম। আলমগীর হোসেন তার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে জন্মনিবন্ধন নিতে আসলে ঘুরে যেতে হয় তাকে। চেয়ারম্যান না থাকায় পরদিন আবারও তাকে আসতে হবে এখানে নদী পার হয়ে।নদী পাড়ের একাধিক মানুষের সাথে কথা বললে তারা জানায়, এভাবে তাদের বছরের পর বছর কষ্ট করে চেয়ারম্যানের কাছে আসতে হয়। আর চেয়ারম্যান না থাকলে বা বিদ্যুৎসহ ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে বার বার ঘুরতে হয় এসব অস্থায়ী পরিষদে।তবে তাদের সবারই দাবী প্রত্যেক ইউনিয়নের যেনো একটি নিজস্ব ভবন থাকে। আর সরকারের সকল সুবিধা সবাই নিতে পারে।সারিয়াকান্দি উপজেলার বোহাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামন খান জানিয়েছেন, ২৫ বছর তার বাবাও একই ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বার ছিলেন কিন্তু তখনও তিনি কোন পরিষদ ভবন দেখেননি। আর ৪০ বছর বয়সি এই চেয়ারম্যান জানেন না বোহাইল ইউনিয়নের পরিষদ ভবন কোথায় ছিল। এ অবস্থায় চলছে কয়েক দশক ধরে। ইতোপূর্বে যারা চেয়ারম্যান ছিল তারাও একইভাবে বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া বাসা কিংবা নিজের বাসায় নাগরিক সেবা দিতেন বলে জানান এ চেয়ারম্যান।তিনি আরও জানান, বোহাইল ইউনিয়ন যমুনা নদীর কারণে তিন ভাগে ভাগ হয়েছে। একটি পূর্ব অংশে ধারাভাস্যার চরে, আরেকটি নদীর মাঝে আর অপরটি নদীর ডান প্রান্তে। এ কারণে সারিয়াকান্দি সদরে একটি অফিস নিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে অন্যটি ধারাবর্ষা চরে অফিস নেয়া আছে। তবে এভাবে একজন নাগরিকের সব ধরনের সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। নদীর চরে থাকা মানুষের যেমন কষ্ট হয় তেমনি নিজেও সঠিক সময়ে সেবা দিতে না পারায় সন্তুষ্ঠি হয় না। কয়েক দশকের এ সমস্যা সমাধানে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর ভাঙ্গনে চারটি ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব কোন ভবন নেই। আর যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ না হওয়ায় কারণে এ ভবনগুলো এখনও হয় নি। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ ইউনিয়নগুলো আন্তঃ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সাব-মার্সিবল রোড করার জন্য। তবে ভবনের জন্য ৪০ শতাংশ টেকসই জায়গা দরকার পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রিত আছে এমন একটি জায়গা হলে ভবন তৈরি করা যাবে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে পাশাপাশি চারটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের জানানো হয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্যার পানি উঠে না এমন জায়গা নির্ধারণ করতে। এসবই ঠিক থাকলে ভূমি অধিগ্রহণসহ সব ধরনের পরিকল্পনা নেয়া হবে।অন্যদিকে শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়ন পরিষদের তিন মেয়াদে চেয়ারম্যান হলেও কোন নিজস্ব ভবন নেই। এ ইউনিয়ন নদী কবলিত না হলেও ২০০৬ সালে নতুন নামে একটি ইউনিয়ন ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সালে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও প্রায় এক যুগেও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার।শাহবন্দেগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, গত দুই মেয়াদে চেয়ারম্যানের সময় কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে তিনি ২৬ শতক জায়গা ইতোমধ্যে কিনেছেন পরিষদের জন্য। সরকার বরাদ্দ দিলে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।বর্ষায় চলাচল কিছুটা সহজ হলেও শুকনো মৌসুমে প্রত্যাশিত সুবিধা পেতে চালুয়াবাড়ি, বোহাইল, চন্দনবাইশা ও কর্নিবাড়ি ইউনিয়নের মানুষের হাটতে হয় অনেক পথ আর ব্যয়ও হয় প্রচুর। এ অসুবিধা থেকে দ্রুতই মুক্তি চান এলাকার সাধারণ মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা।