দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন জনপদে শুরু হয়েছে সংঘবদ্ধ ভূমি দস্যুদের অপতৎপরতা। গোপনে নানা কৌশলে চলছে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সরকারি খাস খতিয়ানের, ভিপি তালিকার সম্পত্তি ও পরিত্যাক্ত সম্পত্তি লুটপাট কেনাচেচা করার ব্যাপক তৎপরতা। এ সংঘবদ্ধচক্রের সাথে খুলনার ভূমি সংক্রান্ত নানা সরকারি দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রয়েছে গোপন আঁতাত। যে কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে নিরব।
সেই সুবাদে এ ভূমিদস্যু চক্র নানা দালালদের মাধ্যমে প্রয়োজন মাফিক ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে অবৈধভাবে ভূমির মালিক বনার চেষ্টা করছে। কোথাও অর্পিত সম্পত্তি, কোথাও বিনিময় সম্পত্তি, কোথাও শত্রু সম্পত্তি আবার কোথাও খাস খতিয়ানের সম্পত্তি সর্বত্র ভূমি দস্যুদের নগ্ন থাবা শুরু হয়েছে।
ভূমি দস্যুদের অপতৎপরতা সমাজে টাকা ও পেশি শক্তির সাহায্যে এতই প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে যে সমাজের সাধারণ মানুষ নির্বিকার হয়ে পড়ছে। এদের ব্যাপারে কথা বললে সরকারের নানা মহলে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদের নানা ভাবে হয়রানি করা হয়। এমনকি এ সকল ভূমি দস্যুদের নগ্ন থাবায় মূহুর্তের মধ্যে নিঃস্ব হচ্ছে অনেকে। তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে বনে যাচ্ছে জিরো থেকে হিরো। রাতারাতি পরিচিত হচ্ছে কোটিপতি।
তারই ধারাবাহিকতায় তেমনি একটা ঘটনা দিঘলিয়া উপজেলার উপজেলা পরিষদের খুবই কাছের ও পাশের। দিঘলিয়া উপজেলার ৩ নং সদর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড এলাকায়। দিঘলিয়ার দেবনগর মৌজার ৭৮২ নং খতিয়ানের দাগ নম্বও ১০৬৩, ১০৬৪, ২২৮৩, ২২৯৯, ২৩৫৮, ২৩৪০, ২৩৩৬, ২৩৫২ ও ২৩৫৩ মোট ০.৮১ একর সরকারের ভিপি সম্পত্তি, যা সরকার ৪০-৪২ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইজারা দিয়ে আসছেন।
ভূমি দস্যুরা ভুমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে ওই জমি বি. আর. এস চলাকালে তাদের নিজ নামে অবৈধভাবে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে ওই সরকারি সম্পত্তি থেকে আনুমানিক ৭/৮ লাখ টাকার গাছ কেটে আত্মসাৎ করেছে। এবং ওই জমিগুলো খন্ড খন্ড করে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে দলিল তৈরি করছেন এবং করার অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। যা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দিঘলিয়া থানা ও দিঘলিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে অবহিত করা হয়েছে কিন্তু কোনো মহলই এদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না এমনই অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসী আরো জানিয়েছেন, যে সকল ভূমি দস্যু এ সকল ভিপি সম্পত্তি দখল করছেন তারা আবার কেই কেউ ওই জমির ডিসিআর কাটার জন্য ভূমি অফিসে দরখাস্তও জমা দিয়ে রেখেছেন। আবার বিনিময় সম্পত্তির দাবীদারও সাজিয়ে রেখেছেন এমনি অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা যায়, এ সকল জায়গার ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করতে সংশ্লিষ্টমহল সেনহাটি তহসিল অফিসের সাবেক নায়েব, জরীপ চলাকালীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধমে কয়েক লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে। যার নিরোপেক্ষ তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে।
এ চক্র ওই জমির ওপর থেকে ৭/৮ লাখ টাকার গাছ কেটে আত্মসাৎ করলেও সংশ্লিষ্ট মহল কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি বা গাছ কাটার ব্যাপারে তদন্ত করে আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে লিখিতভাবে জানানো হয়নি এমনটাই জানিয়েছেন এলাকার বিজ্ঞমহলসহ এলাকাবাসী।
এক সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ ভূমি দস্যুদের গাছ কাটার ব্যাপারে এবং অবৈধভাবে এসব জমির কাগজপত্র তৈরি করে জমি আত্মসাতের ব্যাপারে তদন্তের জন্য সেনহাটি তহশীল অফিসের নায়েবের নিকট উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমির পক্ষ থেকে পাঠানো হয় এবং সরেজমিনে নায়েব স্বপন কুমার তদন্তে সরকারি ভি. পি. তালিকা ভুক্ত জমি থেকে লাখ লাখ টাকার কর্তন করে আত্মসাৎ এবং ওই জমি আত্মসাতের অপতৎপরতা প্রমাণ পান। এলাকাবাসীর সকল অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গাছ কাটা বন্ধ করেন এবং কর্তনকৃত গাছ জিম্মায় নেন। সকল ঘটনা মুঠোফোনে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল আলমকে অবহিত করেন।
উল্লেখ্য যে, দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল আলম, সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ মাহমুদুর রহমান ঘটনা জানার পরও ভূমি দস্যুরা এতটুকু নড়ে বসেনি, বরং ওই জমির সকল গাছ অপসারণ করে জমিতে বালি ভরাট করে প্লট করে বিক্রির তৎপরতা চালাচ্ছে এমনটায় জানিয়েছেন আশপাশের লকজন। উল্লেখ্য ওই ভিপি জমি ডিসিআর কেটে যারা (আশরাফুল গং) যুগ যুগ ধরে ভোগ দখল করে আসছিল তাদেরকেও নানা কৌশলে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ওই জমি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। আরো উল্লেখ্য যে ওই জমির ডিসিআর কাটার জন্য অবৈধ দখলদারসহ ৩/৪ জন সেনহাটি ভূমি অফিসে কাগজপত্র জমা দিলেও সাবেক নায়েব ও ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারী যোগসাজসে মোটা অংকের টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভুয়া দলিল ও ভুয়া কাগজে জমি দখলের ও বিক্রি করার পায়তারা করছে।
এলাকাবাসীসহ এলাকার বিজ্ঞমহল এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে আশু আইনের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।