শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য জেলে পাড়ায় নতুন ট্রলার তৈরি ও মেরামতের ধুম পড়েছে। দিন রাত কর্মচঞ্চল জেলে পল্লীতে এক উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। খুলনার পাইকগাছায় বোয়ালিয়া, হিতামপুর, মাহমুদকাটী, নোয়াকাটি, কপিলমুনি, কাটিপাড়া, রড়-লী, শাহাপাড়া, বাঁকাসহ বিভিন্ন গ্রামের জেলে পল্লীতে নতুন ও পুরাতন ট্রলার তৈরির কাজে ধুম পড়েছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে। নৌকা তৈরি কারিগররা ব্যাস্ত সময় পার করছেন। দিনরাত তারা কাঠ ফাইল, তক্তা ও গুড়া বানানো, মসৃণ করা, তক্তা জোড়া লাগানোর কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। এসব কাজে সহযোগিতা করছেন পরিবারের লোকজন। কারিগরদের হাতুড়ির ঠুকঠাক শব্দে মুখরিত হচ্ছে ছেলে পল্লী গুলো। উপজেলার বোয়ালিয়া মালোপাড়া সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মালোপাড়ায় ৬টি নতুন ট্রলার তৈরীর কাজ চলছে। পাশাপাশি পুরাতন ট্রলারগুলি মেরামত করা হচ্ছে। কারিগররা দিনরাত ট্রলার তৈরী কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ট্রলার তৈরীতে জেলে পল্লীতে উৎসব মূখর পরিবেশ। ট্রালার তৈরি করতে বিভিন্ন স্থান থেকে কারিগর আনতে হয়। নৌকা তৈরীর কারিগর সিরাজুল ইসলাম সহ ৫ জন সহকারি ট্রলার তৈরির কাজ করছে। ট্রলার তৈরীতে তাদের থাকা খাওয়া বাদে প্রতিটি নতুন ট্রলার তৈরী বাবদ মজুরী ১ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ৬০ ফুট লম্বা ১৭ ফুট চওড়া একটি ট্রলার তৈরী করতে প্রায় ৫শ সেফটি কাঠ লাগছে। সব কাট দিয়ে আবার ট্রলার তৈরী হয় না। এলাকায় পাওয়া যায় এমন চম্বল, বাবলা, লিছু, ছবেদা, মেহগনী ও খৈ কাঠ দিয়ে তারা নৌকা তৈরী করছে। প্রতি সেফটি খৈ বাবলা ও চম্বল কাঠ ৬শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা দরে ক্রয় করেছে। নতুন ট্রালার তৈরির পর তাতে রং করতে প্রায় ২শত কেজি আলকাতরা লাগে। পুরাতন ট্রলার মেরামত করতে ৩০-৭০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। একটি নতুন ট্রলারে প্রায় ৩ মন পেরেক, ১শ কেজি জলই/পাতাম প্রয়োজন হয়। নৌকা তৈরীর পর তাতে ইঞ্জিন বসাতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। বোয়ালিয়ার জেলে রবিন বিশ্বাস, প্রজিত বিশ্বাসসহ কয়েক জন নতুন ট্রলার তৈরী করছে। তাছাড়া দিপংকর বিশ্বাস, সিতেরাম বিশ্বাস, তাপস বিশ্বাস, দয়াল মন্ডল তাদের পুরাতন ট্রলারগুলি মেরামত করছে। কপোতাক্ষ নদের তীরে বোয়ালিয়া ব্রিজের দুই পাশে ট্রলার তৈরী ও মেরামতের কাজ চলছে। বোয়ালিয়া মালোপাড়ার বিশ্বজিত বিশ্বাস জানায়, সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে ১টি ট্রলার তৈরী করছি। নতুন ট্রলার বানাতে সর্বমোট ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ পড়ছে। মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছে, সাগরে মাছ ধরে তা বিক্রি করে শোধ করবেন। মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে ভয়ংকর, বিক্ষুদ্ধ উত্তাল ঢেউয়ের সংগে যুদ্ধ করে জেলেদের জাল ফেলে মাছ ধরতে হয়। জেলে পল্লী মানুষের আয়ের উৎস্য সমুদ্রে মাছ ধরা। প্রকৃতির সংগে লড়াই করে তাদের জীবিকা অর্জন করতে হয়। তবে এটা যেন তাদের নেশা ও পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই জেলে পল্লীর নারী-পুরুষ সবাই মিলে জালসহ প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র তৈরী ও গোছাতে দিনরাত কাজ করছে। এই নিয়ে জেলে পল্লীগুলোতে সাগর যাত্রার মহাকর্মযজ্ঞ চলছে।