একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না হয়ে দাঁড়িয়েছে মিজানুরের। ঢাকায় রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতো মিজানুর। নিজের কোন জায়গা জমি ঘরা-বাড়ী না থাকায় শ্বশুর বাড়ী পীরগঞ্জের সদরা কুতুবপর কুটি পাড়ায় শ্যালক ইদুল মিয়ার একটি ঘরের বারান্দায় থাকার জায়গা জোটে। জীবিকার তাগিদে সে ঢাকায় রিক্সা চালায়। আর স্ত্রী চম্পা বেগম তাঁর মায়ের সাথে গ্রামেই একটি চাতালে কাজ করে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের রোজগারে ১ শিশু পুত্র সন্তান নিয়ে মোটামোটি সুখেই যাচ্ছিল মিজানুরের সংসার। ২০১৪ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনা তার জীবন থেকে সমস্ত সুখ কেড়ে নেয়।
মিজানুর রহমানের বাড়ী পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাট ইউনিয়নের ছোট পাহাড়পুর গ্রামে। বাবা মকবুল হোসেনেরও কোন জায়গা জমি নেই। মিজানুররা ২ ভাই ১ বোন। তাঁদেরকে রেখে বাবা মকবুল বাড়ি ছাড়া হন অনেক আগেই। তখন থেকে তার দেখা নেই। এখন কোথায় আছেন তাও জানেন না। মা অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করছেন। সে বলে-আমাদের সাথে কোন দিন দেখা হয় না। ছোট ভাই একরামুল পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় থাকে। সেখানে রিক্সা চালিয়ে সংসার চালায়। ঢাকায় রিক্সা চালিয়ে সংসার চালানোর পাশ-পাশি ছোট বোন মনজিলাকে বিয়ে দিয়েছেন নও মুসলিম ছেলে শাকিলের সাথে বিগত ২০১০ ইং সালে। ক্র্যাচে দু’হাতে ভর দিয়ে স্ত্রী চম্পা ও পুত্র হৃদয় কে সাথে করে গত সোমবার পীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে আসার সময় কথা হয় মিজানের সাথে। মিজান বলে, ভিক্ষা করা একটি চরম ঘৃনিত কাজ। আমি কোন দিনও পছন্দ করতাম না। কিন্তু ২০১৪ সালে কোরবানীর ঈদে ঢাকা থেকে বাড়ী ফেরার পথে সিরাজগঞ্জ ডালের মোড়ে একটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এই দুর্ঘটনায় ১৬ জন লোক মারা য়ায়। আমিও আহত হই। আমার ডান পা কেটে ফেলতে হয়। আমি আর রিক্সা চালাতে পারিনা। স্ত্রী সন্তানের মুখের দিকে দেখলে খারাপ লাগে। বাধ্য হয়ে যে পেশাকে অপছন্দ করতাম। সেই পেশাকে আলিঙ্গন করতে হলো শেষ পর্যন্ত। এটিই এখন আমার একমাত্র পেশা। মিজান বলে,শানেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাকে পঙ্গু ভাতা করে দিয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনার পর আমাদের এমপি, জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ঢাকাতেই নগদ সাত হাজার টাকা দিয়েছেন। ঢাকা জেলা শ্রমিকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিরুভাই দিয়েছেন ৩ হাজার টাকা। এ ছাড়া আর কোন সহযোগিতা পাইনি। স্পীকার মহোদয়ের কাছে তার আবেদন,আশ্রায়ন প্রকল্পের একটি বাড়ি দিয়ে স্ত্রী সস্তানসহ থাকার বাড়ি হলে,খাবার থাক বা না থাক শিশু ছেলেটাকে আবারও স্কুলে দিতে পারতো। রাতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমুতে পারতো মিজানুর !