ঢাকায় প্রতিদিন যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ঢাকা শহরের একটি ব্যাধি হয়ে উঠেছে এই যানজট। যানজট এখন শুধু রাজধানীই নয়, জাতির জন্যও এক বিড়ম্বনার নাম। দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিচ্ছে এই ভয়ংকর সমস্যা। যানজটের কারণে যে কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে, অর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। রাজধানীর প্রতিটি সড়ক, অলিগলি, গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোয় লেগে থাকছে এ সমস্যা। এ সমস্যা নগরবাসীকে দিনের পর দিন অতিষ্ঠ করে তুলছে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যানজটের কারণে কেবল রাজধানীতে প্রতিদিন বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আয় নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। যা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাঁচ্ছে; কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি রাস্তার সংখ্যা। একটি শহরের রাস্তার পরিমাণ হওয়া উচিত ২৫ শতাংশ। অথচ ঢাকায় মোট রাস্তার পরিমাণ আয়তনের মাত্র ৮ শতাংশ। এর পাশাপাশি অবৈধভাবে ফুটপাত দখল, অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, গাড়ি-ট্রাক-প্রাইভেট গাড়িগুলোর যত্রতত্র পার্কিং, জায়গায় জায়গায় বাস থামিয়ে যাত্রীদের ওঠানামা, গাড়ি চালানোর সময় চালকদের বিরামহীন প্রতিযোগিতা, গাড়িচালকদের অদক্ষতা, ট্রাফিক আইন ঠিকমতো না মানা অন্যান্য কারণগুলোর মাঝে অন্যতম। ব্যক্তিগত গাড়ির বৃদ্ধির কারণেও বাড়ছে যানজট। এই প্রতিবেদনে দেখা যায় রাস্তার যানবাহনের প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ি। কোনো কোনো পরিবারের ৩-৪টি ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে। অন্য একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর মোট রাস্তার ৫৪.২ শতাংশ জায়গা দখলে রাখে প্রাইভেট কার। রাজধানীর যানজট কমাতে যেসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তার কোনটাই কাজে লাগছে না। বরং আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবে সকল পদক্ষেপ বিফলে যাচ্ছে। ২০৩০ সালে ঢাকায় জনসংখ্যা হবে ৩ কোটি। এ প্রেক্ষাপটে যানজট নিরসনে উদ্যোগ নেয়ার সময় এখনই। রাজধানী ঢাকাকে সবার জন্য বসবাসের উপযোগী করতে হলে সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন জরুরি। এই সমস্যা নিরসনে সরকারকে এখনি কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। কলকারখানাগুলো রাজধানী থেকে সরিয়ে পার্শ্ববর্তী স্থানে প্রতিস্থাপন করতে হবে সাথে নতুন কোন কলকারখানাকে রাজধানীর ভিতরে স্থাপনের অনুমতি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ফুটপাতগুলো অবৈধ দখল মুক্ত করতে হবে এই ফুটপাতে মাত্রাতিরিক্ত হকারদের কারণে দেখা যায় যানজট তৈরি হয়। ট্রাফিক সিগনালের ব্যাবহার বাড়াতে হবে এবং ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে পাশাপাশি আইন ব্যাবহারে ট্রাফিক পুলিশদের আরো কঠোর হবে। রাজধানী ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সারা বছরই দেখা যায় রাজধানীর কোনো না কোনো রাস্তায় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হচ্ছে রাস্তার ওপর। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যেও রয়েছে সমন্বয়ের অভাব। এই সমন্বয়তা বন্ধ করতে হবে, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির আগে বিকল্প রাস্তা রেখে তারপর রক্ষণাবেক্ষণ চালাতে হবে। পরিশেষে দেশের নাগরিকদের নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নাগরিকরা নিজেরদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন না হলে সরকারের গৃহীত সকল পদক্ষেপ বিফলে যাবে। আমারা সচেতন না হলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে যা আগামী দিনের ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষের বসবাসকে আরো ব্যয়বহুল ও কঠিন করে তুলবে।