দেশ থেকে মানবপাঁচার বাড়ছে। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তথ্য মতে, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ২৯ হাজার ৭৭৮ বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ওই সাগর পাড়ি দিয়েছে ২৬ লাখ ১৪ হাজার ৯৪ বাংলাদেশি। প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও সহজলভ্যতা শুধু আমাদের জীবনকেই সুন্দর ও সহজ করেনি, প্রযুক্তির অপব্যবহার আমাদের জীবনের অনেক ক্ষেত্রকেই জটিল ও দুর্বিষহ করে তুলেছে। এখন মানবপাঁচারকারীরা আগের চেয়ে অনেক নিরাপদে ও সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুতগতিতে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে। ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে আগ্রহীদের আকৃষ্ট করতে অন্যতম প্রচারমাধ্যম হলো ফেসবুক, টিকটক, লাইকি ও হোয়াটসঅ্যাপ। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন তৃতীয়। প্রতিবছর অবৈধভাবে এই সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে গড়ে নৌকাডুবিতে ৫০০ বাংলাদেশির মৃত্যু ঘটে। বাংলাদেশে এখনো বেকার তরুণ ও যুবকের সংখ্যা অনেক। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগায় দেশি-বিদেশি মানব পাঁচারকারী চক্র। উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে তারা প্রতিবছর শত শত তরুণ-যুবকের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। পাঁচারের শিকার ব্যক্তিরা বিদেশে গিয়ে যৌন নিপীড়ন, দাসত্ব বরণসহ নানা রকম অমানবিক পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। অনেকের মৃত্যুও হচ্ছে। আবার অনেককে জিম্মি করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পাঁচারকারীদের সঙ্গে গন্তব্যের দেশগুলোর পাঁচারকারীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। বিদেশে ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে গ্রামের সরল-সহজ মানুষকে, বিশেষ করে মহিলাদের প্রলুব্ধ করে। তবে বাংলাদেশে এমন লোকও আছে, যারা বিদেশে যাওয়ার জন্য পাঁচারকারীদের প্রচুর টাকাণ্ডপয়সাও দিয়ে থাকে। মানবপাঁচার ও অবৈধ অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ নানাভাবে সমালোচিত হচ্ছে। কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মানবপাঁচারের অভিযোগ আছে। কিন্তু এ পর্যন্ত তাদের কারো শাস্তি হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। মানবপাঁচারের শিকার নারী, শিশু বা পুরুষ যে-ই হোক না কেন, মূলত দারিদ্র্য বা কর্মসংস্থানের অভাবই তাদের ওই পথে যেতে বাধ্য করে। তবে পাঁচার রোধে প্রয়োজনীয় আইনের প্রয়োগ না থাকা, সচেতনতার অভাব এবং ব্যক্তিগত লোভের কারণেও যে মানুষ পাঁচারকারীদের শিকার হচ্ছে না, তেমন নয়। তাহলে মানবপাঁচার বন্ধ হবে কিভাবে? আমরা চাই, আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে এই জঘন্য অপরাধ প্রতিরোধ করা হোক।