দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১১ জুলাই ঢাকায় এসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন শত শত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, ‘দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবেন। কেননা, সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা একই পাঠক্রমে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ান। কিন্তু তাঁদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা এক নয়। এমপিওভুক্ত বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বর্তমানে মূল বেতন পুরোটাই পান। আগে পেতেন ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। কিন্তু বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতার ক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল ফারাক। সরকারি শিক্ষকেরা মূল বেতনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া পান। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা পান মাত্র এক হাজার টাকা। সরকারি শিক্ষকেরা উৎসব ভাতা পান মূল বেতনের সমান। বেসরকারি শিক্ষকেরা পান মাত্র ২৫ শতাংশ। চিকিৎসা ভাতা দেওয়া হয় মাত্র ৫০০ টাকা। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান কর্মসূচিতে থাকবেন। কেবল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ-সব স্তরেই বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন তুলনামূলক কম। তাই যে শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে থাকার কথা, তাঁরা কেন প্রেসক্লাবের সামনে খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়বেন, বৃষ্টিতে ভিজবেন? শিক্ষকদের আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এমনিতেই করোনায় তাদের স্বাভাবিক শিক্ষার কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। অনেক বিষয়ে তারা পুরো পাঠ নিতে পারেনি। যেখানে শিক্ষাবিদেরা আগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশি বেশি ক্লাস নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেখানে স্বাভাবিক ক্লাসই বন্ধ আছে। অথচ সরকার নির্বিকার। শিক্ষাক্ষেত্রে একধরনের নৈরাজ্য চলছে। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিটি যে শতভাগ যৌক্তিক, সে কথা স্বীকার করতে হবে। উন্নত জাঁতি গড়ে তোলার জন্য উন্নত শিক্ষা জরুরি। আর উন্নত শিক্ষার জন্য যে দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক প্রয়োজন, ভালো বেতন-ভাতা না দিলে সেটি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান করছি মাধ্যমিক শিক্ষাসহ সব শিক্ষা জাতীয়করণ ও শিক্ষকদের মানসম্মত বেতন-ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। শিক্ষকদের মানসম্মত শিক্ষা প্রসারের জন্য অর্থনৈতিক মুক্তি প্রয়োজন।