গাজীপুরের কাপাসিয়ায় "মডিউল কমিউনিটি হাসপাতাল এ- ডায়াগনস্টিক সেন্টারে" শিশু সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সিজারিয়ানের ১৪ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার রায়েদে অবস্থিত ওই হাসপাতালে মৃত্যুর ঘটনায় প্রসূতির পরিবার ও এলাকা ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফিরিয়ে দাও আমাদের শাহিদাকে প্রসূতির পরিবার ও স্বজনদের আত্মচিৎকারে এলাকার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে গেছে।
জানা যায়, উপজেলার কড়িহাতা ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী শামীম হোসেন ব্যাপারীর স্ত্রী শাহিদা আক্তার (১৭) প্রসব বেদনা নিয়ে গত ২১ জুলাই ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিজারিয়ানে একটি সুস্থ ছেলে বাচ্চা প্রসব হয়। গাইনী বিশেষজ্ঞ না থাকায় ওই প্রসূতির সিজারিয়ান করেন শিশু বিশেষজ্ঞ উজ্জ্বল কুমার নাগ। কিন্তু সিজারিয়ানের পর প্রসূতির অবস্থা ছিল আশঙ্কা জনক। তিন দিন চিকিৎসার পরও প্রসূতির অবস্থার উন্নতি না হলে নিয়মিত ওষুধ সেবন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিয়ে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তিন দিন অন্তর অন্তর ড্রেসিং করার পরামর্শ দেন। প্রসূতি নিয়মিত ওই পরামর্শ পালন করে আসছেন। ব্যথা নিয়ে রোববার ড্রেসিং করার জন্য আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে প্রতিদিন তিনবার ড্রেসিং করতে হবে বলে জানান। প্রসুতির বাড়ি কয়েক কি.মি দূরে থাকায় যাতায়াতের সমস্যা হওয়ায় হাসপাতালে পুনরায় ভর্তি হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য গত ৫ জুলাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের নাজাই গ্রামের আরিফের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার প্রসূতি বেদনা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে ওই হাসপাতালে বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে প্রসূতি শাহিদার মামি তানিয়া বলেন, শাহিদার প্রসব ব্যথা হলে মডিউল কমিউনিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডাক্তার উজ্জ্বল কুমার নাগ কে দিয়ে প্রসূতি শাহিদার সিজার সম্পন্ন করে। এ সময় শাহিদার একটি ছেলে বাবু হয়েছে। তার অবস্থাও খুব একটা ভালো না। বাবুর নাভিতে সমস্যা এখনো ঘা শুকায়নি। একদিন পর ড্রেসিং করাতে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে আসলে শাহিদার ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হয়েছে বলে হাসপাতাল থেকে জানায়। ইনফেকশনের কারণ জানতে চাইলে হাসপাতাল ম্যানেজার নারায়ন শাহা খারাপ আচরণ করেন।
এ ব্যাপার প্রসূতির মা স্মৃতি আক্তার বলেন, আমার মেয়েকে চাই, আমি আর কিছুই চাইনা। আমি আমার নাতিকে নিয়ে কি করবো। ডাক্তারের ভুল অপারেশন ও তাদের অবহেলায় আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
এ ব্যাপারে শিশু সার্জারী বিশেষজ্ঞ উজ্জ্বল কুমার নাগ বলেন, প্রেগনেন্সির কারণে প্রেশার ও অন্যান্য সমস্যা বা জটিলতা তৈরি করে এতে যেকোন প্রসূতির মৃত্যু হতে পারে। এ প্রসূতির বেলায়ও তা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মডিউল কমিউনিটি হাসপাতাল এ- ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার নারায়ণ সাহা বলেন, প্রসূতি সাহিদা ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক করে মারা গেছে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মামুনুর রহমান জানান, প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হয়েছে যে, একজন গাইনী ডাক্তারের পরিবর্তে শিশু ডাক্তারের মাধ্যমে সিজারিয়ান করা হয়েছে। গাইনি ও সার্জারী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।