দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত জিরার শুল্কায়ন মূল্য দ্বিগুণ করায় ১০ দিন ধরে বন্দর থেকে জিরা খালাস বন্ধ রেখে ছিলো আমদানিকারকরা। অবশেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে নতুন শুল্কায়নে বন্দর থেকে খালাস শুরু করছেন আমদানিকারকরা।
কাস্টমসের দাবি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনায় শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে জিরার দাম আরও বাড়বে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে ২০০ টাকা। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।বাজারের সব মসলার দোকানেই জিরার সরবরাহ ভালো রয়েছে। তবু দাম বাড়তি। বর্তমানে প্রতি কেজি জিরা ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১ সপ্তাহ আগে যা ছিল ৯০০ টাকা। এর গত বছরে জিরার কেজি ছিলো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
ক্রমশই অস্থির হয়ে উঠছে। কোনো ভাবেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। যে জিরা ৩০০ টাকা কেজি কিনেছি, এখন সেটা ১১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। দোকানে বেচাকেনা কমে গেছে। এখন কেজি প্রতি বিক্রি করছি ১১০০ টাকায়। এগুলো আবার আগের কেনা। বর্তমানে মোকামেই জিরার দাম চাইছে ১১২০ টাকা। কিনতেই ২০ টাকা বাড়তি। এতে নতুন জিরা এলে আরো বাড়তি দামে বিক্রি করতে হবে।
ভারত থেকে জিরা আমদানি করে দেশের মানুষের চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু প্রতিবেশী দেশটির যে অঞ্চল থেকে আনা হয়, সেখানেই এবার পণ্যটির দাম বেশি। ভারতে গুজরাটে সবচেয়ে বেশি জিরার আবাদ হয়। কিন্তু এ বছর বৈরি আবহাওয়ায় ভারতে জিরার কাঙ্খিত উৎপাদন হয়নি। এতে সরবরাহে ঘাটতির কারণে ভারতের বাজারেই জিরার দাম বেশি। ফলে বাড়তি দামে আমদানি করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। এ ছাড়া জিরা আমদানিতে ডলারও বেশি লাগে। সব ব্যাংক এলসি খুলতে চায় না। ফলে হিলি বন্দর দিয়ে জিরা আমদানি যেমন কমে গেছে তেমনি বাজারেও সরবরাহ কমে গেছে। দিন দিন দামও বাড়ছে। তার ওপর নতুন করে জিরা আমদানিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে শুল্কায়ন মূল্য নিয়ে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আফগানিস্তান থেকে আমদানিকৃত জিরা সেখানকার কমিশন সাড়ে ৩ হাজার ডলার মূল্য ধরে শুল্ক আদায় করেছেন। এখন সেটা হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত জিরার ওপর ফেলা হয়েছে। কিন্তু আফগানিস্তান বা ইরানের জিরার যে দাম, সেই তুলনায় ভারতীয় পণ্যটি দর কম। কিন্তু সব জিরার একই শুল্কায়ন নির্ধারণ করেছে এনবিআর। ফলে বাড়তি মূল্যে শুল্কায়নের কারণে আমদানিকারকেরা জিরা কাস্টমস থেকে ছাড়করণ ১০ দিন বন্ধ রাখে। এর আগে প্রতি টন জিরা ১৮ শ ৫০ ডলার মূল্যে আমদানি করা হতো। কাস্টমসে ওই মূল্যেই শুল্কায়ন করে ছাড়করণ দিতো। কিন্তু বর্তমানে তারা সাড়ে ৩ হাজার ডলার শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। আগে ১ ট্রাক জিরা আমদানি করতে ৫৫ হাজার ডলার লাগতো। কিন্তু বর্তমানে ১ লাখ ১০ হাজার ডলার লাগবে। আগে যে মূল্যে শুল্কায়ন করা হতো, তাতে ১ কেজিতে শুল্ক দিতে হতো ১১৫ টাকা। আর সাড়ে ৩ হাজার ডলার মূল্যে শুল্কায়ন হলে কেজিতে তা দিতে হবে ২৩০ টাকা। ইতোমধ্যে জিরার দাম বেড়ে গেছে। নতুন করে শুল্কমূল্য বাড়ানোয় দর আরো বাড়বে।
হিলি বাজারে জিরা কিনতে আসা ফরহাদ হোসেন বলেন, বাজারে মসলা কিনতে আসছি, কিন্তু জিরার দাম শুনে মাথা ঘুরে গেলো। এর আগেও ৮০০ টাকা কেজি দরে কিনেছিলাম। আজ তা ১১০০ টাকা কেজিতে কিনতে হলো। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে সাধারণ ক্রেতাদের কি অবস্থা হবে? একজন ভ্যানচালক দুলাল হোসেন বলেন, আমরা গরীব মানুষ ভ্যান চালে খাই। এর আগে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় ১০০ গ্রাম জিরা নিয়েছিলাম, পর ৭০ টাকা শো। শুক্রবার ১১০ টাকায় ১০০ গ্রাম জিরা কিনলাম। এত দাম বাড়লে আমরা কি করে চলবো?
হিলি বাজারের বিস্মিল্লাহ মসলা ঘরের আওলাদ হোসেন শাওন বলেন, কিছুদিন আগেও আমরা ৯০০ টাকা কেজি জিরা বিক্রি করেছি। এখন দাম বেড়ে গেছে, আমরা ১০৮০ টাকা কেজি পাইকারি ক্রয় করে তা ১০৯০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। কি কারণে দাম বাড়ছে তা আমরা বলতে পারছি না। তবে বন্দরে নাকি শুল্ক বাড়ার কারণে আমদানিকারকরা জিরা খালাস বন্ধ রেখেছিলো।
হিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানি-রপ্তানিকারক রবিউল ইসলাম সুইট বলেন, হিলি বন্দরে জিরা নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। গত এক সপ্তাহ আগে রাজস্ব বোর্ড থেকে হিলি কাস্টমসে নির্দেশনা আসছে, জিরার শুল্কায়ন বৃদ্ধির। আগে আমরা ১ হাজার ৮৫০ ডলারে জিরা আমদানি করতাম। বর্তমান তা বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ ৩ হাজার ৫০০ ডলারে আমদানি করতে হবে। বিগত দিনে ৩০ মেট্রিকটন জিরা আমদানিতে ৩২ থেকে ৩৩ লাখ ডলার শুল্ক জমা দিতে হতো। বর্তমান একই পরিমাণ জিরার শুল্ক দিতে হবে প্রায় ৬৫ থেকে ৬৭ লাখ ডলারে। এর কারণে জিরার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় ১৫ মেট্রিকটন জিরা বন্দর অভ্যন্তরে আমরা আমদানি করে রেখেছি। নতুন শুল্কায়নে গতকাল বিকেল থেকে খালাস শুরু করছি।
পানামা, হিলি পোর্ট এর জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাব মল্লিক জানান, হিলি বন্দর দিয়ে জিরা আমদানি অব্যাহত আছে। প্রতিদিনই জিরা আমদানি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পোর্ট অভ্যন্তরে ১০০০ মেট্রিক টন জিরা খালাস বন্ধ রেখে ছিলো। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বন্দর থেকে জিরা খালাস শুরু করছেন আমদানিকারকরা। জিরা আমদানি হলে সরকারের যেমন রাজস্ব বাড়ে। তেমনি পানামা পোর্টের আয় বৃদ্ধি পায়। হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের উপকমিশনার বায়জিদ হোসেন বলেন, আগে প্রতি টন জিরা ১৮৫০ ডলার শুল্কায়ন মূল্য ধরে আরোপিত শুল্ক আদায় করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় এনবিআর জিরার শুল্কায়ন মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।