সরকার চলতি অর্থবছরে দেশব্যাপী সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর ঘোষণা দিয়েছে। ১০ বছর চাঁদা দিলেই পাওয়া যাবে মাসিক সর্বজনীন পেনশন। সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে দেশের সব নাগরিককে পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আনতে এই আইনি কাঠামো তৈরি করছে সরকার। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কেউ পেনশন ব্যবস্থায় যুক্ত হতে পারবেন। ৬০ বছর বয়স থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাওয়া যাবে। ৫০ বছরের অধিক বয়সীরাও এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে অন্যান্যের মতো ৬০ বছর বয়স থেকেই পেনশন সুবিধা পাবেন না তাঁরা। ১০ বছর চাঁদা পরিশোধের পর তাঁরা পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। পেনশনধারী ৭৫ বছর বয়স হওয়ার আগে মারা গেলে তাঁর নমিনি মাসিক পেনশন পাবেন। এ ছাড়া ১০ বছর ধরে চাঁদা দেওয়ার শর্ত পূরণের আগেই কেউ মারা গেলে মুনাফাসহ তাঁর নমিনিকে জমা অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। রাজনৈতিক অঙ্গীকার রক্ষায় ঢাকঢোল পিটিয়ে হয়তো দ্রুত এ ব্যবস্থার উদ্বোধন করা হবে। তবে এত অল্প সময়ে এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। উদ্যোগটা খুব ভালো কিন্তু অনেক বড় কর্মযজ্ঞ হওয়ায় আরও প্রস্তুতি দরকার। উন্নত দেশে নিম্ন আয়ের জনগণের চাঁদা সরকার বহন করে। অনেক লোকের চাঁদা দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য সরকার কী করবে? তাই কর্তৃপক্ষের জনবল নিয়োগের পর অন্তত তিন থেকে চার বছর বিভিন্ন দেশের এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা উচিত। অন্যদিকে সুইডেনে পেনশন-ব্যবস্থার মূল উপাদান হলো একটি পেশাকেন্দ্রিক চাঁদা প্রদানভিত্তিক পেনশন (টায়ার ১)। কিন্তু যাঁদের আয় নেই বা আয় কম, তাঁদের জন্য রয়েছে গ্যারেন্টেড পেনশন (টায়ার ০)। পর্তুগালেও একটি বাধ্যতামূলক চাঁদা প্রদানভিত্তিক পেনশন-ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু যাঁদের পক্ষে চাঁদাভিত্তিক পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ সম্ভব নয়, তাঁদের জন্য রয়েছে চাঁদাবিহীন সামাজিক পেনশন (টায়ার ০)। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এসব পেনশন-ব্যবস্থার মধ্যে যথেষ্ট ভিন্নতা থাকলেও একটি বিষয় সব কটি পেনশন স্কিমের মধ্যেই দেখা যায়। আর তা হলো সব কটি পেনশন-ব্যবস্থাতেই চাঁদাবিহীন করের অর্থে পরিচালিত চাঁদাবিহীন পেনশন (টায়ার ০) কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত, যার মাধ্যমে পেনশন-ব্যবস্থায় নিম্ন আয়ের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশের বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব কর্মী ও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের এক বৃহৎ অংশের পক্ষে চাঁদার বিনিময়ে পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ দুরূহ। এ কারণেই প্রস্তাবিত পেনশন কর্মসূচিকে সত্যিকার অর্থে সর্বজনীন করতে হলে এতে চাঁদাবিহীন পেনশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।