জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল গত ২০২২ ইং সালের ২৬ শে অক্টোবর।তখন সভাপতি হিসেবে আলহাজ্ব ছানোয়ার হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক পদে তেজগাও কলেজের আধ্যক্ষ ড. হারুন অর রশীদ কে নির্বাচিত করে দুই জনের নাম ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা। তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের। কমিটি গঠনে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের দ্বন্দে ১০ মাস পর বৃহস্পতিবার (৩রা আগষ্ট) রাতে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যে বিশিষ্ট কমিটি জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ ও সাধারন সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ কমিটি অনুমোদনে যৌথ স্বাক্ষর করেন।
তবে এ কমিটি নিয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরাই বিরুপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন, প্রস্তাবিত যে কমিটি জামালপুর জেলার নেতাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন, এ নিয়ে কোনো আলোচনাই করা হয়নি প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে। বর্তমান কমিটিতে স্থান পায়নি সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব ডা: মুরাদ হাসান এমপি’র নাম।
দলীয় সূত্র জানায়, সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন পুনাঙ্গ কমিটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেকের নাম বাদ পড়েছে।এর মধ্যে জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। তাদের মধ্যে সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন পাঠান।এ ছাড়া প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ লুৎফর রহমান,উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি প্রাথী হয়েছিন বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও আবুল কালাম আজাদ বিএসসি কে সদস্য করা হয়েছে। সাবেক কমিটির সহ সভাপতির পদ থেকে সদস্য পদে দেয়া হয়েছে সাবেক এমপি ও প্রায় ৫০ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আলহাজ্ব আবদুল মালেক এর পুত্র প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল কে গুরুত্বপুর্ন স্থানে পদায়ন করা হয়নি। সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রমেশ চন্দ্র সুত্রধর কে সদস্য করা হয়েছে। সদস্য পদে স্থান পেয়েছেন এক বিএনপি নেতা- নুরুল আমিন সুরুজ সরকার।স্থান পেয়েছে সদস্য পদে খুন মামলার আসামি সুজাত আলী সরু। মহাদান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদে থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য পদ পেয়েছেন হুমায়ুন কবীর। পৌর কমিটির সহ সভাপতি মঞ্জুর মোশেদ তরফদার সোহেল তিনি উপজেলা কমিটিতে তথ্য ও গবেষনা পদ পেয়েছেন, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খোকন উপজেলা কমিটিতে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদ পেয়েছেন। একই ব্যাক্তি দুটি পদে থাকা নিয়ে চলছে নানা কথা পদ বঞ্চিতদের।
এ ছাড়াও কমিটিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. হারুন অর রশীদ এর বড় ভাই অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ, অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম, ভাগিনা বাশিরুল ইসলাম সেলিম,ভাগিনী জামাই মহাদান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হুমায়ন কবীর কে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য দেওয়া হয়েছে। এ কমিটি নিয়ে পরিবার কেন্দ্রীক কমিটি ,অর্থের বিনিময়ে পদ বিক্্ির ও আধিপত্য বিস্তারে এক পক্ষের পাল্লাভারী এবং আজ্ঞাবহ পকেট কমিটি সহ ভিন্ন নামে অভিহীত করছে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা।
এদিকে কমিটির বিষয় নিয়ে ফেসবুকেও নানা সমালোচনা করছেন অনেকেই।উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রার্থী সাবেক এমপি ও প্রায় ৫০ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মালেক এর পুত্র মঞ্জুরুল ইসলাম বিদ্যুৎ তাকেও কোন সদস্য করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ নেতার অভিযোগ, আমি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে হামলা-মামলা শিকার হয়েছি।আজ আমরা পদবঞ্চিত। তিনি আরও জানান, যারা ওয়ার্ড / ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ নেই তারাই দলের গুরুত্বপুর্ন পদে পদায়িত হয়েছেন এটা দুঃখ জনক। কমিটিতে জায়গা পাওয়া অনেককে নেতা-কর্মীরাই চেনেন না। দলের কর্মসূচিতেও তাদের দেখা মেলেনি। তারা এক নেতার অনুসারী। তাদের কেউ কেউ কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ তোলেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. হারুন অর রশীদ উপজেলা আওয়ামী লীগের পুনাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
তিনি আরোও বলেন, একই ব্যাক্তি ইউনিয়ন কমিটির পদে থেকে উপজেলা কমিটিতে স্থান পেতে পারে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ইউনিয়ন কমিটি থেকে পদ ত্যাগ পত্র ইউনিয়ন কমিটির সভাপতির কাছে জমা দেওয়ার পর উপজেলা কমিটির কাছে পৌছালে আমরা ব্যাবস্থা নিব বলে জানান তিনি। কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগের বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।
জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ছানোয়ার হোসেন বাদশা বলেন, জেলা কমিটি উপজেলা কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। দলের পদ প্রাপ্তদের পত্র দিয়ে জানানো হবে।