দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য ফসল উৎপাদনে বেশি খরচ হলেও রোপা আমনে কম খরচে কৃষকরা ঘরে তোলেন ধান। এবার সেটির ব্যত্যয় ঘটেছে। রোপা আমন ধান চাষে পানির অভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন উপজেলার আমন চাষিরা। বোরো ধান রোপণে গভীর ও অগভীর নলকূপের পানি দিয়ে আবাদ করলেও আমন ধান চাষে পুরোটাই বর্ষার পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ বছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল হলেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ বৃষ্টির দেখা মিলেনি। বরং প্রচন্ড খরতাপে মানুষসহ প্রাণিকূলের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আবাদি জমিগুলো পানিশুন্য হয়ে পড়েছে। সেই সাথে খরতাপে অনেক বীজতলা শুকিয়ে চারা বিবর্ণ হওয়ার উপক্রম হতে দেখা দিয়েছে।
শ্রাবণ মাসেও মাঠে পানির জন্য হাহাকার। দেখা নেই আকাশের কাক্সিক্ষত বৃষ্টির। রোপা আমনের জন্য প্রস্তুত করা জমিগুলো ফেঁটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুনতে গুনতে অস্থির প্রান্তিক কৃষকেরা। আকাশে শ্রাবণের মেঘের ঘনঘটা থাকলেও দেখা দিচ্ছে না কাঙ্খিত বৃষ্টি। ফলে আমন ধানের চাষ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বাড়তি খরচের বোঝা মাথায় নিয়ে শ্যালো মেশিনের সেচ দিয়ে রোপা আমন চারা রোপণ শুরু করেছে কৃষকরা। এতে কৃষকদের চোখে-মুখে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ২৩ হাজার ৫ শত ৮৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫ হাজার ১ শত ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছেন চাষিরা। ১ হাজার ২ শত ৫০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।
উপজেলার নশরতপুর, সাতনালা, ফতেজংপুর, ইসবপুর, আব্দুলপুর, সাঁইতাড়া, আলোকডিহি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, একমাত্র নিচু ও ডোবা জাতীয় জমি ছাড়া সব জমিই পানিশুন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। চাষিরা দ্রুত কোনো রকমে জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করছেন। অনেক জমি চারা রোপণের উপযোগী করা মাত্রই পানিশুন্য ও অনেক জমি চারা রোপণের পর শুকিয়ে গেছে। আবার অনেক কৃষক জমির মাটি চারা রোপণের উপযোগী করবে বলে প্রস্তুতি নিতেই সেই জমি শুকিয়ে যাওয়ায় ওই জমি এখন পর্যন্ত অনাবাদি রয়েছে। ভরা এই আমন মৌসুমে বৃষ্টিপাতের অভাবে পানির সংকট দেখা দেওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গভীর ও অগভীর নলকূল দিয়ে পানি সেচের ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছে।
উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের খামার সাতনালা গ্রামের চাষি মো. জিল্লুর রহমান, নশরতপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের কাঞ্চন সরকার জানান, আমন ধান বর্ষার পানি নির্ভরশীল ফসল। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে পানির অভাবে তারা ঠিকমতো জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না। শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে ৬-৮ ঘন্টা পানি দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হচ্ছে। এতে প্রতিঘন্টা ২০০ টাকা করে মেশিন ভাড়া দিতে হচ্ছে কৃষকদের। পানি দিয়ে হালচাষ করে জমি রেখে দিলেই তা শুকিয়ে যাচ্ছে।
তবে অনেক এলাকায় পানি সেচের ব্যবস্থা করা হলেও তাদের এলাকায় এখনো পানি সেচের ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই তারা ধান রোপণ ও ফলন নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা শারমিন বলেন, রোপা আমন ধানে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাবের কারণে এবার জমিতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। তবে ইতিমধ্যেই উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ চালিত গভীর ও অগভীর নলকূপ চালু করে পানি সেচের ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকায় সেচ যন্ত্র চালু করা হয়নি, সেসব এলাকায় যাতে অচিরেই সেচযন্ত্র চালু করে আমন ধান রোপণের পানি সংকট দূর করা যায় সে লক্ষ্যে পল্লীবিদ্যৎ ও নেসকো লি. কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন।