ডেঙ্গুতে সারা দেশে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই উদ্বেগজনক। হাসপাতালগুলোতে ধারন ক্ষমতার তুলনায় রোগী এখন অনেক বেশি। তাই বাধ্য হয়ে কম অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসকরা বাড়িতে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এ বছর গত জুলাইয়ে সাতগুণ বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বড় সিটি করপোরেশনগুলোর কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বিক্ষিপ্তভাবে অকার্যকর কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে সারা দেশে মোট ৯ হাজার ৩৮৬ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার মধ্যে ঢাকা মহানগরীর ভেতর ৫ হাজার ১১ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪ হাজার ৩৭৫ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৫১। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে চলতি বছর মোট ৫১ হাজার ৮৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও অনেকে পরীক্ষা করান না বা হাসপাতালে ভর্তি হন না। প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গু রোগী তার কয়েক গুণ বেশি হবে। যেসব রোগী হাসপাতালে মারা গেছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশ এসেছেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে। অসচেতনতার কারণে অনেকে বিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান, এটা সত্য। কিন্তু যাঁরা আগেভাগে পরীক্ষা করাতে যান, তাঁদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ আছে। সরকারি হাসপাতালে ৫০ টাকায় ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩০০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা হয়। স্বাভাবিকভাবে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের ভিড় বেশি। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার রিপোর্ট পান না। চিকিৎসকেরা দ্রুত ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু পরীক্ষার ফল দ্রুত না পেলে তাঁরা চিকিৎসা নেবেন কীভাবে? ডেঙ্গু মোকাবিলায় যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা অনেকটা গতানুগতিক। তদুপরি ডেঙ্গুর ধরনও বদলে গেছে। প্রতিটি হাসপাতালে প্রাথমিক পরিচর্যা কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন, যেখান থেকে ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার পাশাপাশি রোগীর পরিচর্যা করা হবে। রোগ ধরা পড়ার পর তাঁদের বাড়িতে না পাঠিয়ে কেন্দ্রে রেখেই চিকিৎসা করা ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি বা বেসরকারি কোনো হাসপাতালের সেই সক্ষমতা নেই। বছরের শুরুতে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ও উদ্যোগী ভূমিকা নিলে হয়তো পরিস্থিতি এতটা নাজুক হতো না। কেবল চিকিৎসা দিয়ে তো ডেঙ্গু নির্মূল করা যাবে না। ডেঙ্গু নির্মূল করতে হলে আগে এডিস মশার উৎসগুলো ধ্বংস করতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে সারা বছরই কাজ করতে হবে। ডেঙ্গু রোগে কী করণীয় তা আমরা সবাই জানি। তাই আতঙ্কিত না হয়ে আমরা সবাই মিলে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ করা অবশ্যই সম্ভব।