দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে, তখনো মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে কর্তৃপক্ষ নানা উদ্যোগ নিলেও তা কেন কাজে আসছে না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে এক বছরের ব্যবধানে প্রায় সব পণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়েছে। বছরের পর বছর অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, এটা এক প্রশ্ন। অভিযোগ রয়েছে, বাজার পর্যবেক্ষণে জড়িত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজশের কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এবং ক্রেতাদের জিম্মি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, এটাও বহুল আলোচিত। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে না পেরে রীতিমতো দম বন্ধের উপক্রম হচ্ছে ক্রেতাদের। গত বছর অস্বাভাবিক হারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। এর প্রভাবে পণ্য পরিবহণ, গণপরিবহণের ভাড়া এবং সব ধরনের সেবার দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয়ছে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম। এসব কারণেও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য পণ্যসহ বিভিন্ন সেবার দাম। গত কয়েক মাসে গড় মূল্যস্ফীতির নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে, যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হালনাগাদ তথ্যেও উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে অনেক পণ্যের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। এ অবস্থা কতদিন চলবে, তা ভেবে মানুষের উদ্বেগের শেষ নেই। সরকারকে অবিলম্বে এসব দিকে জোরালো দৃষ্টি দিতে হবে। খাদ্য তালিকা থেকে পুষ্টিকর খাবার বাদ দিলে মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার হবে। এর প্রভাব পড়বে জনশক্তির ওপর। অপুষ্টির কারণে যে মানের জনশক্তি তৈরি হবে, তা দিয়ে নতুন শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কতটা সম্ভব হবে? লক্ষ করা যায়, কোনো পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পেলে তখনই স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ে। কিন্তু কোনো পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে হ্রাস পেলে স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ে দেরিতে। শুধু তাই নয়, নিত্যপণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশের বাজারে এর উলটো চিত্র লক্ষ করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমার প্রভাব দেশে না পড়ার মূল কারণ কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব। নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের বেঁচে থাকার উপায় কী? বর্তমানে ধানকাঁটার মৌসুমেও চালের দামে অস্থিরতা লক্ষ করা যায়। এ থেকেই স্পষ্ট অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কারসাজি অব্যাহত থাকলেও অপরাধীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে না। রাজধানীসহ সারা দেশের হাটবাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রায় সব ধরনের পণ্য বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে মসলাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাজারে যে ধরনের অস্থিরতা চলছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বাজার তদারকি সংস্থার দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করাও জরুরি। পণ্য ও সেবার দাম যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, সেজন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।