গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে জেলা শহরের বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। এদিকে বৃষ্টির ফলে বান্দরবান পৌর এলাকার বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার দুপুরে বান্দরবান পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড এর কালাঘাটা বীর বাহাদুর নগর পাহাড় ধস ঘটে। এতে রুমি আক্তার (২৮) নামে এক নারী গুরুতর আহত হন। এর পরপরই ৬নং ওয়ার্ড স্টেডিয়াম এলাকায় ফের পাহাড় ধসের আরেকটি ঘটনা ঘটে। এতে মো. রিদুয়ান (১৯) নামে আর এক যুবক আহত হন। পাহাড় ধসের ঘটনার পরপরই স্থানীয় বাসিন্দারা আহতদের পাহাড়ের মাটি সরিয়ে উদ্ধার করে এবং সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে। বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা.মাহবুবুর রহমান পাহাড় ধসে আহত দুজনকে দেখতে ছুটে যান হাসপাতালে এবং তাদের শারীরিক অবস্থার কথা জানেন। এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের নিদের্শনা দেন। এ সময় ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. এম এম নয়ন সালাউদ্দিন, সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা.ইশতিয়াকুর রহমান ,সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অফিসার সা সুই চিং মারমাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরে বান্দরবানে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং চালাচ্ছে প্রশাসন। এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবান জেলা সদরের আর্মি পাড়া, বালাঘাটা সড়ক, ইসলামপুরসহ সাংগু নদীর তীরবর্তী এলাকায় বিভিন্ন বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। টানা বর্ষণে পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক এবং খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বান্দরবান সদরের আর্মি পাড়ার বাসিন্দা মো. বাবুল বলেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ঘরে বাইরে সর্বত্র পানি আর পানি। পরিবার পরিজন নিয়ে বিপদের মধ্যে আছি। একই এলাকার বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম বলেন, বৃষ্টির পরিমাণ এত বেশি যে ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। জরুরি কাজেও বাইরে যেতে পারছি না। বৃষ্টির কারণে বালাঘাটা সড়কের ব্রিগেড এলাকায় সড়কে পানি জমে থাকায় যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ পথচারীদের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। বান্দরবান আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বান্দরবানে যা এই বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এদিকে বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নারগিস আক্তার জানান, বান্দরবানে গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণের ফলে বিভিন্নস্থানে ছোট ছোট পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং অব্যাহত রেখেছি। তিনি আরও জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য পুরো জেলায় ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে এবং জেলা সদরে ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। তবে এখনো কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আসেনি। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে পৌরসভায় বসবাসরত পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা বিভিন্ন পাহাড়ে পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে নির্দেশনা দিচ্ছে। বান্দরবান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নাজমুল আলম বলেন, পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে যেতে আমরা কাজ করছি এবং আমাদের নির্দেশনা শুনে অনেকে পাহাড় ছেড়ে সমতলে অবস্থান করলেও কেউ কেউ এখনো পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে যা এই সময়টার জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।