গাজীপুরের টঙ্গীতে ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন পশ্চিম থানাধীন গুটিয়া, আন্দারুল, বাকরাল, ভাদাম ও মুদাফা এলাকার পাঁচটি গ্রামের মানুষ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই সশস্ত্র ডাকাতদলের সদস্যরা ইঞ্জিন চালিত দ্রুতগতির বিশেষ নৌ-যান নিয়ে তুরাগ নদের শাখা দিয়ে বিলে প্রবেশ করে। তাদের হাত থেকে রেহাই পাঁচ্ছেনা সাধারণ যাত্রীবাহী, পিকনিক, মালবাহী ট্রলার। দুধর্ষ ডাকাতরা আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যাত্রীবাহী ট্রলার ও মানুষের বাসাবাড়িতে হানা দিয়ে মূল্যবান মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যাচ্ছে। ডাকাতিকাজে বাঁধা দিলে নেমে আসে মারধর, নির্যাতন। ডাকাতদের ছোঁড়া গুলি ও মারধরে গুটিয়া এলাকার অন্তত: ৬/৭ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন-সুমন মিয়া (৩৮), সোহাগ মিয়া (২৬), সায়েম ওরফে বাবু (২৭), আবদুল কাইয়ুম (৩২), সানোয়ার হোসেন (২৭), আকরাম হোসেন (২৫) ও জাকারিয়াসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজন। এদের মধ্যে ডাকাতদের ছোঁড়া গুলি লেগে সায়েম ওরফে বাবুর চোখ নষ্ট হয়ে গেছে এবং সোহাগ মিয়া হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। ডাকাতির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ সায়েমের স্বজনরা গত জুলাই মাসে টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও নৌ-পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও দৃশ্যত: ওই এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় পুলিশী তৎপরতা না থাকায় ডাকাতরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফলে ডাকাত আতঙ্কে থাকেন ওই এলাকার শিশু, বৃদ্ধ ও কিশোর-কিশোরীসহ সব বয়স এবং শ্রেণি পেশার মানুষ। ডাকাতদের ভয়ে এলাকাবাসী রাত জেগে বাড়িঘর পাহারা দিচ্ছেন।
এলাকাবাসীরা জানান, গত দেড় মাসে গুটিয়া, আন্দারুল, বাকরাল, ভাদাম ও মুদাফা গ্রামের বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও বিলে ৬-৭টি ডাকাতির ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই ডাকাতরা দ্রুতগতির দুই মাথায় ইঞ্জিন লাগানো বিশেষ নৌ-যান নিয়ে বিল ও তুরাগ নদে পানিতে চলাচলরত ট্রলারগুলোতে হানা দেয়। সুযোগ বুঝে বিভিন্ন বাসা বাড়িতেও হানা দিয়ে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। এদের হাত থেকে এলাকার মৎসজীবি, কৃষক, পর্যটক ও পিকনিকে ঘুরতে আসা লোকজনও রেহাই পাঁচ্ছে না। তাদের ডাকাতি কাজে বাধা দিলে নেমে আসে মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন। গুটিয়া এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত্বের সহযোগিতায় সাভার আমিন বাজার এলাকার জলদস্যু ও ডাকাত সর্দার রাজন, টেক্কা, লেদু, শামীম দেওয়ানসহ ৩০-৩৫জনের একটি ডাকাতদল ৩-৪টি ইঞ্জিন চালিত বিশেষ নৌ-যান নিয়ে বিভিন্নভাগে ভাগ হয়ে গুটিয়া, আন্দারুল, বাকরাল, ভাদাম, মুদাফা, পলাশোনা, ইছরকান্দিসহ তুরাগ নদের পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠা গ্রামগুলোতে প্রতিনিয়ত ডাকাতি করে আসছে। থানা এলাকা থেকে এসব গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম না হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনের লোকজন খবর পেলেও সময় মতো সেখানে পৌছতে পারছেন না। এছাড়াও টঙ্গী মিরাশপাড়া নৌবন্দর এলাকায় নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও তুরাগ নদ বা আশপাশের এলাকায় নৌ পুলিশের কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুটিয়া, আন্দারুল ও বাকরাল গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গত জুলাই মাসে মাঝামাঝি সময় একদল সশস্ত্র ডাকাত গুটিয়া এলাকার আবদুল মান্নানের ট্রলার ডাকাতি করে ছিনিয়ে নেয়। কয়েকদিন নর্থ টাউন প্রকল্পের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদের ঘাট থেকে সায়েম ওরফে বাবুর ট্রলার ডাকাতদলের সদস্যরা নিয়ে যাওয়া সময় তিনি বাঁধা দিলে ডাকাতরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে তিনি চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরত্বর আহত হন। আহতাবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। গুলির আঘাতে তার দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। এর কয়েকদিন পর সোহাগ মিয়া গুটিয়া বিলে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে গেলে তাকেও গুলি করে আহত করে ট্রলার নিয়ে যায়। এর আগে কৃষক জাকারিয়ার বাসায় হানা দেয় ডাকাতদল। এ সময় তার মেয়ের বিয়ের জন্য কেনা স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা পয়সা ডাকাতি করে নিয়ে যায় ডাকাতদলের সদস্যরা। এছাড়াও বাকরাল-আন্দারুল বিলের মধ্যবর্তীস্থানে পারিবারিক পিকনিকের ট্রলারে হানা দিয়ে ডাকাতরা যাত্রীদের মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। এর আগে গাজীপুরের মির্জাপুর এলাকা থেকে ট্রলারে তুরাগ নদে ঘুরতে আসা যাত্রীদের মারধর করে পানিতে নামিয়ে দিয়ে ট্রলার নিয়ে যায়।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন ৫২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গুটিয়া, আন্দারুল, বাকরাল, ভাদাম, মুদাফাসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রতিনিয়ত ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে পিকনিকের ট্রলারগুলোতে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে বেশি। বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে পশ্চিম থানা পুলিশ ও নৌ-ফাঁড়ি পুলিশকে জানিয়েছি। যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী নৌ-ফাঁড়ি পুলিশের এসআই আবদুল মান্নান বলেন, আমরা প্রায় সময়ই তুরাগ নদে নৌ টহল দিয়ে থাকি। ডাকাতির ঘটনাটি আমাদের জানা নেই। তবে ওইসমস্ত এলাকায় নৌ টহল আরও বৃদ্ধি করা হবে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, বর্ষাকালে নদণ্ডনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওইসব এলাকার গ্রামগুলোর নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। তাই ডাকাতির মতো ঘটনা সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে ওইসব এলাকায় থানা পুলিশ নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালিত করছে।