চলমান মশক নিধন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রথম বারের মতো বিটিআই কীটনাশক প্রয়োগ করল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সোমবার ডিএনসিসির অঞ্চল ৩-এর গুলশান-২ এলাকার ৪৭ নং সড়কের নরওয়ে রাষ্ট্রদূতের বাসভবন এলাকায় এই কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আতিকুল ইসলাম বলেন, আজ আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। গত ৪০ বছর ধরে আমরা টেমিপোস্ট (কীটনাশক) ব্যবহার করতাম মশক নিধনে। কিন্তু, আমরা দেখেছি অন্যান্য উন্নত বিশ্বে আজ ব্যবহার করছে বিটিআই কীটনাশক। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে এটি ব্যবহার করছে, সিঙ্গাপুরে ব্যবহার করছে, মায়ামি সিটিসহ বিভিন্ন দেশে এই বিটিআই ব্যবহার করছে। দেখার পরে আমরা বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে এটা নিয়ে এসেছি। মেয়র বলেন, বিটিআই পরিবেশ রক্ষা করে। অর্থাৎ, এটি যখন আমরা ব্যবহার করছি, এখানে মাছের কোনো ক্ষতি হবে না, জলজ প্রাণীর ক্ষতি হবে না। এতে লাভটা কী হচ্ছে? লেকে যে মাছগুলো আছে, এগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ক্ষতিকর লার্ভা ধ্বংস করবে। এর ফলে, আমরা অতীতে ড্রেনে গাপ্পি মাছ ছাড়তাম। কিন্তু, এই মাছগুলোকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম না। এখন লার্ভাটা মরবে, গাপ্পি মাছগুলা থাকবে। এ ছাড়া গাপ্পি মাছগুলো আবার লার্ভা খেয়ে ফেলবে। এর ফলে, বায়োলজিকাল ট্রিটমেন্ট করতে সুবিধা হবে। প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে পুরো টিমকে আগামী পাঁচ দিন ট্রেনিং করে কীভাবে এটি প্রয়োগ করতে হয়, সেটি শেখানো হবে বলেও জানান মেয়র আতিক। তিনি বলেন, একবার প্রয়োগ করা হবে এটি পানিতে যখন থাকবে, ১০ দিনের মধ্যে আর স্প্রে করতে হবে না। এতে আমাদের যে জনবল আছে, আমি আরও অনেক বেশি এরিয়া কাভার করতে পারবো। আগে সপ্তাহে দুবার টেমিপস্ট ব্যবহার করতে হবে। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে আবার সাত দিন পরপর করতে হবে। তিনি আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে ডিএনসিসির অধীন ওয়ার্ডগুলোতে এই কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আজ ৩, ৯, ১০ এই তিনটি অঞ্চলের কর্মীরা প্রশিক্ষণ নেবেন। মেয়র বলেন, এটি প্রয়োগের একটি মাপ আছে। আমাদের যে ট্যাংকটা আছে, সেটি ১০ লিটার। এখানে আমরা ৭৫ গ্রাম বিটিআই কীটনাশক মিশিয়ে দিচ্ছি। এটি প্রতি ১ গ্রামে, ১ স্কয়ার মিটার এলাকা কাভার করছে। তাহলে আমরা ৭৫ গ্রাম যদি মেশাই সেটি ৭৫ স্কয়ার মিটার কিন্তু কাভার করবে। এই অংকটা কিন্তু খুব জরুরি। আমরা এটা হিসেব করে বের করেছি যে আমাদের ১০ লিটারের ট্যাংকের জন্য এই ৭৫ গ্রাম বিটিআই কীটনাশক লাগবে। এটি এজন্য জরুরি আমরা ৭৫ গ্রামে ৭৫ মিটার কিন্তু কাভার করব। এরচেয়ে বেশি এলাকায় কিন্তু কাজ হবে না। সুতরাং, আমাদের এখন কাজ হচ্ছে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বলেছি আমাদের যে টিম আছে, তাদের ক্লাস নিবে এবং শেখাবে কিভাবে, কতটুকু প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, একবার প্রয়োগ করার পর এটি পানিতে যখন থাকবে, ১০ দিনের মধ্যে আর স্প্রে করতে হবে না। এতে আমাদের যে জনবল আছে, আমি আরও অনেক বেশি এরিয়া কাভার করতে হবে। আগে সপ্তাহে দু'বার টেমিপস্ট ব্যবহার করতে হবে। যদি, বৃষ্টি হয় তাহলে আবার ৭ দিন পরপর করতে হবে। তিনি আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে ডিএনসিসির অধীনস্থ ওয়ার্ডগুলোতে এ কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আজকে ৩, ৯, ১০ এই তিনটি অঞ্চলের কর্মীরা প্রশিক্ষণ নেবেন। আতিকুল বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের বেজমেন্টে একটি চ্যালেঞ্জ আছে। যদিও, বেজমেন্টে যাওয়ার কথা আমাদের না। আমি নগরবাসীকে সাহায্য করব, আমরা যেন বেজমেন্টে গিয়ে এ বিটিআইটা প্রয়োগ করতে পারি। কারণ, এ বেজমেন্টেই পাওয়া যাচ্ছে ৪৩ শতাংশ লার্ভা। অফিস, আদালত, হাউজিং এর যারা আছে, সবাইকে বলব আমাকে সহযোগিতা করেন। এটি প্রয়োগ করতে পারলে, আমরা একটি চেষ্টা করে দেখতে চাই চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি কিনা। দেখা যাক কি হয়, সফলতা কেমন হবে সেটি সময় বলে দিবে। আমরা ৫ টন বিটিআই কীটনাশক এনেছি, যেগুলো আগামী ৩ মাস ধরে প্রয়োগ করব। বিটিআই কীটনাশক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেস্ট ক্যামিক্যালের এক্সপোর্ট ম্যানেজার লি চিওং বলেন, এটি বেশ ভালো কার্যকর আমার অভিজ্ঞতা বলে। এটি একবার কোনো এলাকায় প্রয়োগ করলে ১০ থেকে ১৫ দিন আর প্রয়োগ করা লাগবে না। এ সময় অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. এ.কে.এম শফিকুর রহমান, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমান ও বিটিআই কীটনাশক সাপ্লাইয়ার প্রতিষ্ঠান বেস্ট ক্যামিক্যালের এক্সপোর্ট ম্যানেজার লি চিওং।