দেশের আবাদি জমিগুলো প্রায় পানিশূন্য। ভরা বর্ষায়ও ভারি বৃষ্টি নেই। প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। ফলে কাঙ্খিত বৃষ্টির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি কার্যক্রম। আষাঢ়ের পর শ্রাবণে বৃষ্টির ঘাটতিতে আমন আবাদ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। গত বছরও বৃষ্টির অভাবে দেশে আমন আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছিল। শেষমেশ সারাদেশের বেশিরভাগ কৃষকই সেচ পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিয়ে আমানের চারা রোপণ করেছিলেন। ফলে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এবারও সেই একই অবস্থা। ভারি বৃষ্টি নেই। কোথাও কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে ছিটেফোটা। তাতে মাটিই ভিজছে না। বৃষ্টির অভাবে এ বছর আমনের বীজতলা তৈরিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বীজতলা তৈরির। সেচ দিয়ে যারা বীজতলা রক্ষা করছেন তাদের চারার বয়স বেড়ে যাচ্ছে রোপণ করতে না পারায়। এই অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক। অথচ দেশে বোরোর পর আমন থেকেই চালের সবচেয়ে বড় জোগান আসে। আর আমন পুরোটাই বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় আবাদে খরচ কম লাগে। সাধারণত দেশে আষাঢ়-শ্রাবণ কিংবা জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু এ বছর জুলাই প্রায় শেষ হলেও আশানুরূপ বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকেই এখনো আমন আবাদ করেনি। পানির অভাবে নষ্ট হচ্ছে তাদের বীজতলা। আবার বীজের বয়স বেশি হয়ে গেলে ফলন কমে যায়। পাশাপাশি দেরিতে আবাদ হলে রোগবালাই বেশি হয়। এ অবস্থায় আমন আবাদে কৃষকের সার ও কীটনাশকও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে। বর্তমানে নির্ধারিত সময়ে যারা চারা রোপণ করতে পেরেছেন তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে সেচের ওপর। সব মিলিয়ে আমন চাষে কৃষকের হাল খরচ, সেচ খরচ ও শ্রমিক খরচ বেশি পড়ছে। এর মধ্যে সেচ খরচ যুক্ত হলে সার্বিকভাবেই বৃষ্টিনির্ভর আমনে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এখন আমন উৎপাদন কম হলে সমস্যা তৈরি হবে। ভারত চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। আবার শস্য চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় বৈশ্বিকভাবেই খাদ্য নিয়ে শঙ্কা তৈরি রয়েছে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তৈরি হবে সংকট। সেজন্য কৃষককে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা ও সার্বিক সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। আর উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয় সেক্ষেত্রে আগে থেকেই নীতি গ্রহণ করা জরুরি। গত বছরও খুব ভালো ফলন হয়েছে। এটা ধরে রাখতে হবে।’