একটি দূর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। সেই কান্নার পাল্লা দিন দিন ভাড়ি হয়ে মরন ফাঁদে রূপ নিয়েছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক। ব্যস্ততম এ জাতীয় মহাসড়কের ভাঙা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত এখন প্রায় প্রতিনিদিনই ঘটছে ছোট-বড় অসংখ্য দূর্ঘটনা। আর এতে করে অকালে ঝড়ে যাচ্ছে কোন না কোন মায়ের সন্তান। পাশাপাশি চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরন করছেন কোন না কোন পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ব্যক্তিটি।
ফলে জীবিকার তাগিদে এখন প্রতিনিয়ত মরন ফাঁদে পরিনত হওয়া এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে ভূক্তভোগীদের। গত ১২ দিনে মহাসড়কের গৌরনদী অংশেই ছয়টি দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন ও গুরুত্বর আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৫ জন ব্যক্তি। আহতদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। ফলে এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। পাশাপাশি রহস্যজনক কারণে দূর্ঘটনাকবলিত একটি যানবাহনের চালক ও স্টাফ গ্রেপ্তারতো হয়নি, বরং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোন আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। ফলে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অন্যান্য যানবাহনের চালক ও স্টাফরা। অথচ দুর্ঘটনাকবলিত যানের মালিক, চালক ও স্টাফদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সচেতন বরিশালবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে পূর্বের চেয়ে প্রায় চারগুন বেশি যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু কোথাও অপ্রশ্বস্ত সড়কের উন্নতী হয়নি। পাশাপাশি মহাসড়কের পাশের সোল্ডারে নেই কোন মাটি। ফলে বিবেকহীনভাবে বেপরোগতির দূরপাল্লার যানবাহনগুলো ওভারটেকিং করতে গিয়ে, মহাসড়কে চলাচল করা ছোট যানবাহনগুলো সড়কের পাশের সোল্ডারে মাটি না থাকায় খাদে পরে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি অপ্রশ্বস্ত মহাসড়কে বেপরোয়াগতির দূরপাল্লার যানবাহন ও স্থানীয় ছোট যানগুলো একসাথে চলাচল করতে গিয়েই দূর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই স্থানীয়রা দ্রুতগতিতে অপ্রশ্বস্ত মহাসড়কের ভাঙা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত জাতীয় এ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নতী করনের কাজ শুরু করার জন্য জোর দাবি করেছেন।
সূত্রমতে, সর্বশেষ গত ৭ আগস্ট ভোরে মহাসড়কের গৌরনদীর আশোকাঠী নামক এলাকায় একটি চাল বোঝাই ট্রাক উল্টে পরেছে। এর আগেরদিন ৬ আগস্ট রাতে মহাসড়কের গৌরনদীর টরকী বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্নস্থানে নসিমন ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন গুরুত্বর আহত হয়েছে। ৫ আগস্ট রাতে মহাসড়কের ইল্লা-ভুরঘাটার মধ্যবর্তী বটতলা নামক এলাকায় যাত্রীবাহি বাস ও ট্রাক্টর দিয়ে তৈরি অবৈধ ট্রলির সংঘর্ষে বাসযাত্রী এক যুবক ঘটনাস্থলেই নিহত ও বাসের ১০ জন যাত্রী আহত হয়েছে। ২ আগস্ট মহাসড়কের আশোকাঠী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এনা পরিবহনের যাত্রীবাহি পরিবহন উল্টে পুকুরে পরে যায়। এ সময় বাসের চাঁপায় এক মোটরসাইকেল চালক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ঘটনায় বাসের ১২ যাত্রী আহত হয়। ২৬ জুলাই মহাসড়কের মাহিলাড়া বাজারে বাস ও কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। ২৫ জুলাই মহাসড়কের আশোকাঠী এলাকায় যাত্রীবাহি ইলিশ ও শ্যামলী পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ইলিশ পরিবহনটি উল্টে মহাসড়কের পাশের ডোবায় পরে যায়। এতে নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়।
তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী হাইওয়ে থানার ওসি গোলাম রসুল বলেন, মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে হাইওয়ে পুলিশ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। দূর্ঘটনা প্রতিরোধে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হলেও কোন ক্রমেই ওয়ারটেকিং বন্ধ করা যাচ্ছেনা। তিনি আরও বলেন, পরিবহন চালক ও যাত্রীদের মধ্যে একপ্রকার কে আগে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যেকারণে বেপরোয়াগতিতে দূরপাল্লার পরিবহনগুলো চলাচল করতে গিয়ে অপ্রশস্ত মহাসড়কে বিবেকহীনভাবে ওভারটেকিং করতে গিয়েই দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। দূর্ঘটনা প্রতিরোধে পরিবহন মালিক, চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের সকলের সচেতন হতে হবে। ওভারটেকিং ও বেপরোয়াগতিতে চলাচল না করে কিছু সময় বেশি ব্যয় করে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই দূর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে ওসি বলেন, অধিকাংশ দূর্ঘটনার পর ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যস্থতায় পরিবহন মালিকদের সাথে আপস মীমাংসা হওয়ায় আমরা কঠোর কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছিনা। তারপরেও বেপরোয়াগতির কারণে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন যানবাহনকে মামলা দিয়ে থাকি।