গত কয়েকদিন ধরে অনেকটাই পানিবন্দি হয়ে আছেন বন্দর নগরী চট্টগ্রামরে মানুষ। বাসাবাড়ি তো বটেই, সড়কের কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও আবার পানির উচ্চতা কোমর ছুঁয়েছে। কয়েকদিন ধরে ভারি বৃষ্টি যেন ‘আশার গুড়ে বালি’ হয়ে দেখা দিল চট্টগ্রামবাসীর জীবনে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের নিম্নাঞ্চল এ নিয়ে অন্তত ১০ বার ডুবল। এর আগে ২০২২ সালে ১২ বার ডুবেছিল চট্টগ্রাম। আগের বছর ২০২১ সালে ডুবেছিল ১০ বার। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে জুন মাসে থেমে থেমে কয়েক বার ডুবে যায় নগরী। তবে এতদিন দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেই পানি অনেকটা নেমে গিয়েছিল। কিন্তু এবার টানা বর্ষণের কারণে পানি সেভাবে নামার সুযোগ পাঁচ্ছে না। ভোগান্তিটা তাই এবার বেশি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতেও কোথাও কোথাও কোমর সমান পানি জমে আছে। ফলে এই সড়ক দিয়ে রিকশা ছাড়া তেমন কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারেনা। যেসব গাড়ি বের হয় তার মধ্যে বেশিরভাগই পানি ঢুকে বিকল হয়ে মাঝ রাস্তায় পড়ে থাকে। এদিকে যেসব এলাকার বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে সেসব এলাকায় বন্ধ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ। এতে পানিবন্দিদের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েন নিচু এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের ঘরের নিচতলা পানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকার মধ্যে একটি হচ্ছে চকবাজার এলাকা। এই এলাকার চক বাজার সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা পড়েছে বিপাকে। নিচতলায় প্রসাধনী সামগ্রীর দোকান, বিপণী বিতান এসব দোকানের বহু মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। আবার পানির কাড়নে দোকান খুলতে পাড়ছে না। জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ৬ বছরে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তবে এরপরও ভোগান্তি কমেনি নগরবাসীর। থেমে থেমে বৃষ্টি তার সাথে আবার জোয়ারের পানিতে পুরো অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে শহরের মানুষের জীবনযাত্রা। শহরটিতে দিন দিন বাড়ছে মানুষের সংখ্যা। সেই সাথে বাড়ছে নান স্থাপনা। তৈরি করা হচ্ছে নতুন নতুন অবকাঠামো। কিন্তু তার সাথে তাল মিলিয়ে বাড়েনি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। বৃষ্টির পানির প্রবাহ সচল রাখতে নালা-নর্দমা-খাল পরিষ্কার রাখা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করাসহ তদারকি বাড়ানো হয়নি। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত এসব বিষয়ে ভালো করে তদারকি করা। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে সমস্যা গুলো খুঁজে বের করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কোথায় কোথায় নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই সেই যায়গাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে এই ভোগান্তী থেকে রক্ষা পাবে সাধারণ মানুষ। খুব দ্রুত সরকার একটি পদক্ষেপ নিবে এমনটি কাম্য সবার।