একটি দেশের ভবিষ্যৎ হলো সে দেশের তরুণ সমাজ। তারুণ্যের শক্তিই পারে যেকোনো দেশকে এগিয়ে নিতে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে এই তরুণ সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আজকে আমাদের এই তরুণ সমাজ অপসংস্কৃতির কারণে পড়ছে ঝুঁকির মুখে। যেকোনো জাঁতি ও দেশের সামগ্রিক বিকাশলাভের শ্রেষ্ঠতম প্রকাশক হল তার সংস্কৃতি। মানুষের শিক্ষাদীক্ষা, আচার-আচরণের বিবর্তনের মাধ্যমেই প্রতিটি জাঁতি নিজের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়েছে। সংস্কৃতির মূল কথা হল নিজেকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে গড়ে তোলা এবং অপরের নিকট নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। কোনো সংস্কৃতি যখন ওই দেশের কার্যকলাপে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এবং নৈতিকতা বিবর্জিত হয় তখন তাকে অপসংস্কৃতি বলা হয়। অন্য ভাবে বলা যায় শিক্ষা ও সভ্যতার অবনতি ঘটিয়ে যে সংস্কৃতি মানুষকে সুন্দর থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তাই অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতি মানুষকে কলুষিত করে এবং জীবনের সৌন্দর্য বিকাশকে স্তব্ধ করে দিয়ে শ্রীহীনতার দিকে ঠেলে দেয়। ধর্ষণ, অশ্লীলতা, ঘুষ, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নোংরামি, খুন, ছিনতাই, প্রতারণা এইগুলো সবই অপসংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন নাম। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে তরুণরা খুব সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে অপসংস্কৃতিতে, তরুণরা অপসংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। তার কারণ এতে চমক আছে উত্তেজনা আছে আর আছে ক্ষণিক আনন্দ। এই আকর্ষণের কারণে তরুণ সমাজ ধীরেধীরে ধাবিত হচ্ছে ধ্বংসের মুখে। বর্তমানে অপসংস্কৃতি তরুণ প্রজন্মের সুন্দর ও স্বাভাবিক বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের তরুণ সমাজ অপসংস্কৃতির স্রােতে গা ভাসিয়ে দিয়ে শৃঙ্খলাহীন জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সংস্কৃতি যেমন জীবনকে সুন্দরের পথ দেখায় আর অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দরের পথে নিয়ে যায়, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। আজকের তরুণ সমাজই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি, আগামীর বিশ্ব তথা দেশ গড়ার কারিগর। তরুণদের এই অপসংস্কৃতির মতো বিভীষিকাময় মরীচিকা থেকে ফিরিয়ে আনা আমাদের একান্ত কর্তবও। তাই এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হলে অপসংস্কৃতির ক্ষতিকর দিকটি জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে। বাবা মায়েদের সন্তানকে ভালো লেখা পড়ার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। দেশের যুবসমাজকে আধুনিক, দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে হলে তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাই অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশে শিশুকাল থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। অপসংস্কৃতির ক্ষতিকর দিক সমূহ মিডিয়ার মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে হবে। একটি দেশে সংস্কৃতির চর্চা যত বেশি হবে, ওই দেশের সমাজও ততবেশি আলোকিত হবে। তাই দেশের উন্নয়নে অপসংস্কৃতি বর্জনের কোন বিকল্প নেই। তাই অপসংস্কৃতি যাতে সমাজকে কলুষিত করতে না পারে সে জন্যে রাষ্ট্রপরিচালকদের সচেতন হতে হবে তেমনি সচেতন হতে হবে সর্বশ্রেণীর নাগরিকদের, তাহলেই একটি সুস্থ ও সুন্দর আগামী আমারা পরবর্তী প্রজন্মকে উপহার দিতে পারবো।