মাইক্রোবাসে উঠে সেলফি তুলে ফেসবুকে ‘মাই ডে’ করেছিল পাভেল। লিখেছিল ‘গোয়িং টু রাজশাহী’। রাজশাহীর কাটাখালি থানার সামনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের পীরগঞ্জের ১৭ জন যাত্রী নিহত হয়। বিগত ২০২১ সালের ২৬ মার্চ দুপুরে ওই দূর্ঘটনা ঘটে। এতে একমাত্র বেঁচে যাওয়া কলেজ ছাত্র পাভেল ইসলাম। সে এখন আর্থিক সংকটে পড়ে লেখাপড়ায় ইতি টেনেছেন। রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এ- কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়তো। জীবনযুদ্ধে পরাজিত মেধাবী পাভেল পড়তে চায়, বাঁচতে চায়। কিন্তু হানিফ পরিবহনের কর্তৃপক্ষ পাভেলকে কোন আর্থিক সুবিধা না দেয়ায় তার সব স্বপ্ন এখন শেষের পথে।সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ২০২১ সালের ২৬ মার্চ সকালে একটি মাইক্রাবাসে পীরগঞ্জের কয়েকটি ব্যবসায়ী পরিবারের ১৮ জন সদস্য রাজশাহীর শাহ মখদুম (রঃ) এর মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। রাজশাহীর কাটাখালি থানার সামনে সড়কের বাঁকে বেলা পৌনে ২ টার দিকে ঢাকাগামী হানিফ এন্টারপ্রাইজের (কেটিসি) একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো ব ১৫-৩৮১০) সাথে পীরগঞ্জের হাইস মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো চ-১৩-৭০৬৬) মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ১৭ জন নিহত হন। দূর্ঘটনায় মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে আগুন ধরে ঘটনাস্থলেই ১১ জন নারী, পুরুষ ও শিশু পুড়ে বিভৎস হয়। অপর ৭ জনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে আরও ৬ জন মারা যায়। আর একমাত্র যাত্রী পাভেল বেঁচে যায় সৌভাগ্যক্রমে। দূর্ঘটনায় পাভেলের বাবা ও মা নিহত হন। ওই ঘটনায় কাটাখালি থানার এসআই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে হানিফ এন্টারপ্রাইজ (কেটিসি) এর চালক (অজ্ঞাতনামা) কে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালানোর অভিযোগ উল্লেখ করেছেন বাদী। দুর্ঘটনায় অচেতন অবস্থায় পাভেলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছিল। তার চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করেন তৎকালীন আই.সি.ইউ ইনচার্জ ডাঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল। পাভেল পীরগঞ্জের দ্বাড়িকাপাড়া গ্রামের মোখলেছার রহমানের ছেলে। তখন সে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এ- কলেজের একাদশ শ্রেনীর মানবিক বিভাগের ছাত্র। বর্তমানে পাভেল অনেকটা শারিরীক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। মুলত কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ। পাভেলের মুখের বামপাশের উপরের মাড়ির দুটো দাঁত ভেঙ্গে যাওয়া তার কথা জড়িয়ে যায়। অস্পষ্ট কথা বলে। পাভেলের চাচাতো ভাই সাগর মিয়া বলেন, দুর্ঘটনার দিন পাভেল হায়েস গাড়ীতে উঠে মোবাইলে সেলফি তুলে তার ফেসবুকের ‘মাইডে’ তে আপলোড দিয়ে লিখেছিল, ‘গোয়িং টু রাজশাহী।’ তিনি আরও জানান,ওই দিন মাইক্রোবাসে জায়গা না হওয়ায় পাভেলের ছোট বোন মোহনা আক্তার জান্নাতি মৌ পিকনিকে যেতে পারেনি। তাই সে বেঁচে গেছে। মৌ পীরগঞ্জ শেখ হাসিনা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণিতে পড়ছে। পাভেল ইসলাম জানায়, রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এ- কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে অন্যত্র ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করতে বলেছে। আমি ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিতাম। এখন টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারছি না। হানিফ পরিবহনটির চালক আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত জামিনে রয়েছে। তারা মামলাটিকে ধীরগতিতে পরিচালনার জন্য সবকিছু করছে। তাতে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। সে আরও বলেন, হানিফ পরিবহনের পক্ষ থেকে আমাকে ক্ষতিপুরনের টাকা দেয়া হলে আমার সহ ছোট বোনের লেখাপড়া করাতে পারতাম। তার স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে বলে, আমি পুলিশ লাইন্স স্কুল এ- কলেজ থেকে পড়াশোনার পর পুলিশের কর্মকর্তা হয়ে দেশ সেবা করতাম। কিন্তু সে স্বপ্ন এখন দুরাশায় পরিনত হয়েছে। মামলাটির বাদী কাটাখালি থানার এসআই নুর মোহাম্মদ বলেন, মামলার চার্জশীট দেয়ার পর পুলিশের আর কিছু করার থাকে না। অপরদিকে মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মসলেম উদ্দিন বলেন, চার্জশিট দেয়ার পর মাননীয় আদালত যদি আরও তথ্যাবলী চায়,তাহলে তা দিতে হয়। এখন কোন তথ্য জানতে হলে উকিলের মাধ্যমে জানতে হবে।