৫৪ বছরের ইতিহাসে ৫৪ তম ব্যাচে প্রথম একসাথে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ পেলো দুইজোড়া যমজ শিক্ষার্থী। যমজ দুই ভাই তামিম ও তাহমিদ এবং যমজ দুই বোন স্বর্ণা ও বর্ণা একসাথে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের ৫৪ তম ব্যাচে ভর্তি হয়েছেন।
যমজ দুই ভাই তামিম হাওলাদার ও তাহমিদ হাওলাদারের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার লাকুটিয়া গ্রামে। কিন্তু বাবার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় কেটেছে তাদের শৈশব ও কৈশোর। এ ছাড়া যমজ দুই বোন স্বর্ণা হালদার ও বর্ণা হালদারের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের চরহোগলায়। নদীবেষ্টিত জনপদ মেহেন্দীগঞ্জেই তারা বেড়ে উঠেছেন। এমনকি উচ্চমাধ্যমিকপর্যন্ত সেখানেই পড়াশোনা করেছেন। স্বর্ণা ও বর্ণার বাবা শ্যামল হালদার পেশায় একজন ওষুধ ব্যবসায়ী। এ ছাড়া তামিম ও তাহমিদের বাবা একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন।
দুই পরিবারের তারা চারজন শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর গত ১ আগস্ট ৫৪ তম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়। ক্লাস শুরুর দিন থেকেই সহপাঠীদের নজর কেড়েছে দুই জোড়া যমজ ভাই-বোন। এরপর সময় যতো গড়িয়েছে তাদের নিয়ে সহপাঠীসহ ক্যাম্পাসে সকলের কৌতূহল কেবল বেড়েই চলেছে। হঠাৎ করে দেখলে দুই ভাই এবং দুই বোনকে আলাদা করা বেশ কঠিন। হুবাহুব মিল তাদের চলন-বলন ও চেহারার। এ কারণে এখন পর্যন্ত কলেজের কেউ তাদের আলাদা করে নাম ধরে ডাকতে পারছে না। দুই ভাইয়ের একজনকে দেখলে ডাক দেওয়া হচ্ছে তামিম-তাহমিদ বলে। একইভাবে যমজ বোনদের একজনকে দেখলে ডাকা হচ্ছে স্বর্ণা-বর্ণা বলে। তবে এ সিদ্ধান্তহীনতাকে বেশ উপভোগ করছেন শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গত পহেলা আগস্ট ক্লাস শুরুর পর থেকেই দুই জোড়া নতুন মুখ খুব পরিচিত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাসে। ক্লাস শেষ হওয়ার পর গল্প করা, লাইব্রেরী থেকে শুরু করে ক্যান্টিনে যাওয়া সবখানেই তাদের দেখা মিলছে একসঙ্গে। তাদের যারাই দেখছে তারাই ডেকে নিয়ে কথা বলছে। জানতে চাচ্ছে দুই ভাই ও দুই বোনের বেড়ে ওঠার গল্প। একইসাথে একই মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবার গল্প ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা। তারাও হাসি মুখে সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। আগ্রহ নিয়ে গল্পে মেতে থাকে সহপাঠি ও সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজে একইসঙ্গে লেখাপড়া করে বেড়ে ওঠা এই দুইজোড়া যমজ ভাই ও বোনের নেই বাইরের কোন বন্ধু। তামিমের বন্ধু তাহমিদ এবং বর্ণার বন্ধু স্বর্ণা। পড়াশুনায়ও তারা একে অপরকে সহযোগিতা করেছন। কোন প্রতিযোগিতা নয়; বরং সহযোগিতাকে সম্বল করে বেড়ে উঠেছে দুই পরিবারের দুই জোড়া যমজ। নিজেদের মধ্যে সবকিছু ভাগাভাগি করতে করতে তারা এসেছে কাঙ্খিত সাফল্যের দোঁড় গোড়ায়। তারা মানবিক এবং মেধাবী চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
যজম দুই বোন স্বর্ণা-বর্ণা বলেন, মেহেন্দীগঞ্জে চিকিৎসকের সংকট বেশ প্রকট। বাবা ওষুধ ব্যবসার সাথে জড়িত থাকায় ছোটবেলা থেকে বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের ধারনা ছিল। তাই স্কুলজীবন থেকে আমরা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। যজম তামিম ও তাহমিদ বলেন, আমরা দুই ভাই একে অপরের খুব ভালো বন্ধু।
একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একই শ্রেণিতে যমজ ভাই ও বোনের পড়াশোনা করা নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু দুই ভিন্ন পরিবারের দুই জোড়া যমজ ভাই-বোন একই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়ার এমন ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না। এমন বিরল ঘটনাই এবার দেখা গেল বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে।
কলেজের ইতিহাসে এটি একটি অভূতপূর্ণ ঘটনা বলে মন্তব্য করে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের বায়োকেমেষ্ট্রি বিভাগের প্রভাষক ডা. রাশেদুজ্জামান বলেন, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটিতে এই প্রথম একসঙ্গে একই শিক্ষাবর্ষে দুই জোড়া যমজ ভাই-বোন ভর্তি হয়েছে। এর আগে ৪৪ তম ব্যাচে যমজ দুই বোন শিক্ষার্থী ছিলেন।