সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আগমীকাল শুক্রবার রাজধানীতে গণমিছিল করবে বিএনপি। গত বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল জানান, আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমা ঢাকায় দুটি গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে মহানগর উত্তরে একটি এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণে একটি। এ কর্মসূচিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও অংশ নেবে। কর্মসূচি পালনে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করছি। এ সময় গণমিছিলের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, হামলা-গ্রেপ্তার করে আন্দোলন দমানোর আর সুযোগ নেই। ফখরুল বলেন, যে আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে নিজেদের সুবিধামতো করে নিয়েছে বর্তমান সরকার। এ সরকার দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা মোকাবিলায় সরকারের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের মোড়কে দেশে একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে। গত ১৪ বছরে অন্যায়, অত্যাচার, লুণ্ঠন ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে ফোকলা বানিয়ে ফেলেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। মাত্র দুই কোটি টাকার জন্য তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের কোনো বিচার হচ্ছে না। তিনি বলেন, নির্বাচনে অযোগ্য করতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে সাজা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, কারণ নির্বাচনের আগেই সরকার মাঠ ফাঁকা করতে চায়। ফখরুল বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই আওয়ামী লীগ অত্যন্ত ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। তবে গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, সার্বভৌমত্বের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করা এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্যমূলকভাবে শান্তি সমাবেশের নামে বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মসূচিতেই বাধা দিয়েছে। গণতন্ত্রের যে নূন্যতম নর্মস, তাও নেই আওয়ামী লীগে। আমরা যেদিন কর্মসূচি দিয়েছি, সেদিনই তারা কর্মসূচি দিয়েছে, আমরা শিফট করলে তারাও আবার শিফট করে। কতটা ভিনডেক্টিভ (প্রতিহিংসাপরায়ণ) হলে, কতটা ভয় পেলে একটি রাজনৈতিক দল এ ধরনের কাজ করতে পারে। বিএনপি আন্দোলনের নামে জনগণকে জিম্মি করেছে, মানুষ হত্যা ও অগ্নিসন্ত্রাস করছে- প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এমন বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী কতটা সত্য বলেছেন তা আপনারা সাংবাদিকরা ভালো বলতে পারবেন। গত কয়েক বছরে আমাদের আন্দোলন আপনারা দেখেছেন, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। আমরা সচেতনভাবে যে কোনো রকমের সহিংসতা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, দলের কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, শাম্মী আখতার প্রমুখ। ডিবি অফিস এখন ভাতের হোটেল- রিজভী। ডিবি অফিস এখন ভাতের হোটেলে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গত বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলায় সাজার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, কখন কি হয়, কাকে কোথায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়, কতকিছু যে করা হয় এখন! আমাদের নেতাদের ধরে উধাও করা হয়। চার-পাঁচদিন পর বলা হয়, গোয়েন্দা হেফাজতে আছেন। ক’দিন পর থানায় দেওয়া হয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের যেন স্বাভাবিক জীবনযাপন করার কোনো অধিকার নেই। রিজভী বলেন, আমরা জানি ডিবি অফিস বিরোধী দলের জন্য একটি আতঙ্কের ঘর। অনেক আয়নাঘর সেখানে রয়েছে। তিনি বলেন, এখন গোয়েন্দা দপ্তর হয়েছে ভাতের হোটেল। বিভ্রান্তি তৈরি করে সেখানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অপদস্থ করার জন্য শুধু মিথ্যা মামলা, জুলুম-নির্যাতনই করা হচ্ছে না, সরকারের পক্ষ থেকে অনেক চক্রান্ত সেখানে করা হচ্ছে। এ অবস্থার অবসানে সবার নিরাপত্তার জন্য এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। না হলে এই দেশে আর কেউ কথা বলতে পারবে না। মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার প্রমুখ।