বাংলাদেশ অর্থনীতির সব খাতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে প্রদীপের নিচেই যেমন অন্ধকার থাকে তেমনি যখন জনগণ উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে তখন কার্যকর উদ্যোগের অভাবে তাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা পড়ছে হুমকির মুখে। এর পেছনে অন্যতম প্রভাবক তামাক ও তামাকজাত পণ্যের যথেচ্ছ ব্যবহার। তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরাগ, স্ট্রোক, ক্যানসারসহ নানাবিধ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। এবং অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা অনেক খরচসাপেক্ষ এবং দীর্ঘমেয়াদি বলে এটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য একটি বড় হুমকি এবং জাতীয় অর্থনীতি অগ্রসরের পথেও বড় বাধা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার পরও তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক উদ্যোগ আটকে রয়েছে দীর্ঘ সময়। তাই দেশে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে যে দুর্বলতা রয়ে গেছে। সেগুলো দূর করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসির আলোকে আইনটিকে সংশোধন করা প্রয়োজন। যেহেতু বিশ্বে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সঙ্গেই তামাক জড়িত। ফলে যত দ্রুত আইনটি সংশোধন করা হবে তত বেশি মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। সেজন্য সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধসহ, তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ; তামাক কোম্পানির যে কোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ; ই-সিগারেটের মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টগুলো পুরোপুরি নিষিদ্ধ; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করতে হবে। শুধু ধূমপান নয়, ধোঁয়াবিহীন তামাক জর্দা, গুল, সাদাপাতার ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করতে হবে। যেহেতু’ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশ। তাই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সরকারকে অবশ্যই জনস্বাস্থ্যকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। তা না হলে এসডিজি লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে না। সেজন্যে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ধূমপান প্রতিরোধে আইন করা হোক। আইন করতে গেলে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। তারপরও এ আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে তামাকপণ্য ব্যবহারের হার কমে যাবে।