বাগেরহাটের শরণখোলার উত্তর রাজাপুর গ্রামে শুক্রবার সন্ধ্যায় মা ও মেয়েকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঐ রাতেই বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল ইসলাম ও মোড়লগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম আশিকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার (১২আগস্ট) মামলার প্রধান আসামীসহ তিন সহোদরকে (ভাই) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের আ. সামাদ হাওলাদারের তিন ছেলে মনির হাওলাদার (৪২), নেহারুল হাওলাদার (৪৮) ও মিলন হাওলাদার (৪০)। শরণখোলা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করে ওই আসামীদের। দুপুরে জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল সূত্র এতথ্য নিশ্চিত করেছে। মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনা শরণখোলায় এই প্রথম।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উত্তর রাজাপুর গ্রামের আবু জাফর হাওলাদারের স্ত্রী পাপিয়া বেগম (৩৫) ও তার শিশু কন্যা সাওদা জেমি(৫)কে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় সাওদা ঘর থেকে বেরিয়ে পাশেই চাচার উঠানে গিয়ে ডাক চিৎকার দেয়। ধারনা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা ঐ খানেই আবারো ধাড়ালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সাওদাকে হত্যা করে। মুহুর্তের মধ্যে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে লোকজন ছুটে এসে সাওদার মৃতদেহ দেখতে পায়। পরে পাপিয়াকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে শরণখোলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করে। শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ইকরাম হোসেন তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
এ ঘটনায় পাপিয়ার একমাত্র ভাই আলামিন খলিফা বাদী হয়ে শরণখোলা থানায় মামলা দায়ের করেছে। আলামিন খলিফা জানায় তার ভগ্নিপতি জাফর কাজের জন্য ঢাকায় থাকে। বোন পাপিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১৩টি ধারালো অ¯্রাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শিশু সাওদার পেটে এবং গলায় ধারালো অ¯্রাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার বোন ও নিষ্পাপ শিশু সাওদার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
পাপিয়ার ভাসুর স্কুল শিক্ষক আবু তালেব টুকু অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই কাজের সুবাদে ঢাকায় থাকেন। তার ছেলেটি থাকে মঠবাড়িয়াতে। বাড়িতে শুধু ভাইয়ের স্ত্রী ও ময়েটি থাকতো। একা থাকার সুযোগে প্রতিবেশী লম্পট মনির হাওলাদার ভাইয়ের স্ত্রীকে (পাপিয়াকে) নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিত। মনিরের ভয়ে মেয়েকে নিয়ে রাতে অন্য বাড়িতে থাকতো পাপিয়া। মনিরের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে তারা। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা সদর রায়েন্দার ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আজমল হোসেন মুক্তা বলেন, পুলিশ প্রশাসন সঠিকভাবে তদন্ত করে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার করার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়ক ইনস্পেক্টর বাবুল আক্তার জানান, জোড়া খুনের ঘটনায় শনিবার সকালে শরণখোলা থানায় ৩০২/৩৪ ধারায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার প্রধান আসামীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। শিগগিরই এই হত্যাকা-ের সঠিক রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইকরাম হোসেন জানান, নিহত পাপিয়া বেগমের ভাই আল-আমীন খলিয়া বাদী হয়ে মনির হাওলাদারকে প্রধান আসামি করে তার অন্য দুই ভাইসহ সাত জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ময়না তদন্তের জন্য মা-মেয়ের লাশ বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।