প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবনের দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ মায়াবী চিত্রল হরিণের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। একদিকে বাঘের হামলা অন্যদিকে চোরা শিকারিদের কবলে পড়ে মারা পড়ছে অসংখ্য হরিণ। থেমে নেই চোরা শিকারিদের তৎপরতা। বন বিভাগের অভিযানে ধরা পড়ছে ১৪ শিকারি সহ ফাঁদে আটকা মৃত্যু হরিণ। এই নিয়ে গত দুমাসে বনবিভাগ ও পুলিশের পৃথক তিনটি অভিযানে ১৬০ কেজি হরিণের মাংস ১৪ শিকারী বিপুল পরিমাণ হরিন ধরার ফাঁদ ও ২টি ট্রলার। বন বিভাগের কড়া নজরদারির পরেও নানা কৌশলে সুন্দরবনে ঢুকে চোরা শিকারীরা হরিণ শিকার করে চলেছে।
ছয় হাজার সতেরো বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বিশ্বখ্যাত এই সুন্দরবনের স্থলভাগ রয়েছে চার হাজার একশত তেতাল্লিশ বর্গ কিলোমিটার। অন্যদিকে এক লাখ তেত্রিশ হাজার দুইশত সাতচল্লিশ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের পর্যটন স্পট হিসেবে খ্যাত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, আলোরকোল, হিরণ পয়েন্ট সহ বিভিন্ন পয়েন্টে বিশেষ করে সকাল ও বিকালে মায়াবী চিত্রল হরিণের পাল দেখা যায়। প্রতিবছর প্রায় অর্ধ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এ চিত্রল হরিন। এ খাত থেকে রাজস্ব আদায় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় কচিখালী অভায়ারন্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃসবুর হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে শরণখোলা রেঞ্জের ডিমের চর এলাকায় ট্রলার ও লোকজন দেখতে পেয়ে চ্যালেঞ্জ করলে বনে পালাবার চেষ্টা করলে বনবিভাগ ১১জনকে আটক করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বনে পেতে রাখা ফাঁদ থেকে একটি মৃত্যু হরিণ উদ্ধার করে। আটককৃতরা হচ্ছে, মো: ইব্রাহিম, মো: জাকির, নির্মল মন্ডল, জাহাঙ্গীর হাওলাদার, মো: হেলাল, জাকির আকন, মো: সবুর, রফিকুল মুন্সী, গোবিন্দ হালদার ও ছগির আকন। এদের বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। এ সময় ২টি ট্রলার ও ফাঁদ জব্দ করে। আটককৃতদের মামলা দিয়ে পরদিন বিকালে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে ১ জুলাই রাতে অভয়ারণ্য কেন্দ্রের বনরক্ষীরা সুখপাড়া এলাকায় বনের মধ্যে ফাঁদ পাতা অবস্থায় তিন শিকারীকে আটক করে। তারা হচ্ছে হানিফ, নিজাম ও মিরাজ এদের বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। হরিণের ফাঁদ, রান্না করা কিছু মাংস ও ফাঁদ জব্দ করে। একটি সূত্র জানায় একটি হরিণের বাকি মাংস পাচার করে দেওয়া হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
অপরদিকে গত ১১ জুন রাতে বলেশ্বর নদীর চরদুয়ানী এলাকায় চরদুয়ানী ফাঁড়ি পুলিশ একটি ট্রলার থেকে ১৬০ কেজি হরিণের মাংস ও জাল জব্দ করে। এ সময় শিকারীরা পালিয়ে যায়।
একটি সূত্র জানায়, একশ্রেণির নানা পেশার মানুষ আছে যাদের হরিণের মাংসের প্রতি লোভ রয়েছে। তাদের চাহিদার কারণে হরিণ শিকারীরা হরিণ শিকার করতে পারলে বিক্রি করতে কোন সমস্যা হয় না। যে কারণে হরিণ শিকারীরা সব সময় অর্থের লোভে হরিণ শিকারের আপতৎপরতা চালিয়ে যায়। এজন্য হরিন শিকার বন্ধ হচ্ছে না।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহবুব হাসান এ প্রতিনিধিকে বলেন, শিকারিদের প্রতিরোধে আমরা সর্বদাই তৎপর রয়েছি। এটা আমাদের বন বিভাগের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যারা শিকারি তারা সচেতন না। কারো কারো ইন্দনে অর্থের লোভে বিশাল আয়তনের এ সুন্দরবনে নানা কৌশলে ঢুকে, কিন্তু যারা হরিণের মাংস খাচ্ছে বা পছন্দ করছে তারা যদি না ক্রয় করে তাহলে এমনিতেই হরিণের মাংস বিক্রি করা বন্ধ হয়ে যাবে। তা হলে হরিণ শিকারীরা হরিণ শিকার করতে বনে ঢুকবে না। এজন্য সর্বমহলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।