নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার উন্নয়ন বাজেটে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও রাস্তা সংষ্কারে কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় ৮০ ভাগ রাস্তা বর্তমানে বিরাজ করছে বেহাল দশায়। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে পৌরসভার প্রধান সড়কগুলোসহ ১৫টি ওয়ার্ডের প্রায় সবগুলো রাস্তারই কার্পেটিং ও খোয়া উঠে গিয়ে ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
সামান্য বৃষ্টিতেই বহু এলাকার রাস্তাঘাট হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। ফলে ড্রেনের নোংরা ও কাদাপানিতে চলাচলে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ অবস্হায় শহরের ব্যস্ততম জিকরুল হক সড়কের জিআরপি মোড়ের উত্তরাংশে খানা-খন্দে সালটি ইটের খোয়া ও রাবিশ ফেলে সমতল করা হয়েছে। এছাড়াও আরও কয়েকটি সড়কে একইভাবে রাবিশ ও সালটি ইটের খোয়া ফেলায় শহরজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৩৪.৮২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভার মোট রাস্তার পরিমাণ ১৭০ কিলোমিটার। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার পাকা রাস্তাই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা এখনো কাঁচাই রয়ে গেছে।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম শিল্প ও ব্যবসা সমৃদ্ধ সৈয়দপুর প্রথম শ্রেণির পৌরসভার রাস্তাঘাটের বর্তমান অবস্হা অত্যন্ত করুণ। রাস্তায় বেড়িয়েই ধকল পোহানো সহ দূর্ঘটনায় পড়তে হয়। সাথে নষ্ট হয় সময়, যানবাহন আর পণ্য সামগ্রী।
এর আগে বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তায় নির্মিত বিমানবন্দর, উপজেলা পরিষদ সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক ও শহীদ তুলশীরাম সড়ক ছাড়া বড় সব সড়কে শুধু যানবাহন নয়, পায়ে হেটে চলাও বেশ দূরহ হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয় মূল সড়কগুলোতে।
আলম নামের এক অটোচালক বলেন, আমরা মরতে বসেছি। শহরের বড় বড় সড়কে খানাখন্দে ভরে গিয়ে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনায় গাড়ীর ক্ষতি হচ্ছে যাত্রীরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
রিকশাচালক সাবদুল বলেন, বছরের পর বছর রাস্তাগুলোর দূরাবস্থা। জনদূর্ভোগ লাঘবে পৌর পরিষদ নির্বিকার। কয়েকদিন হলো কিছুকিছু বড় গর্তে রাবিশ ফেলে ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। রাবিশ ও মাটি বৃষ্টির পানিতে গলে কাদা হয়ে পাকা রাস্তা কাঁচায় পরিণত হয়েছে।
ওয়ার্কার্স পার্টি সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা রুহুল আলম মাষ্টার বলেন, সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সৈয়দপুর শহরে তার বিন্দুমাত্র দৃশ্যমান নয়। প্রতিবছর পৌরসভার দেড়শ কোটি টাকার উপরে বাজেট বরাদ্দের পরও শহরের ৮০ ভাগ সড়কই মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। কারণ পৌর কর্তৃপক্ষ সড়ক মেরামতের কোন কাজই করছেনা। আমরা এর প্রতিবাদে শহরে একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।
সৈয়দপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী জিনাত আরা বলেন, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেতে সড়কে বের হলে চরম ভোগান্তি আর ভোগান্তি! এর চেয়ে গ্রাম গঞ্জের মাটির রাস্তা শতভাগ ভালো।
শহরের বাঁবাড়ী মহল্লার গৃহবধু শেফালি বেগম বলেন,সড়কে প্রায়শই দূর্ঘটনা ঘটছে। অটো, ভ্যান, রিক্সা, মোটর সাইকেল উল্টে পড়ে মানুষ দুর্ঘটনায় পরে আহত হচ্ছে। মালামাল নষ্ট হচ্ছে, গাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ৬ থেকে ৭ বছর আগে কাজ হওয়া রাস্তাগুলোর সংস্কার না হওয়ায় অবস্থা খুবই খারাপ। দুই বছর অনেক কষ্টে সামাল দিয়েছি। আর পারছিনা, অবসরের আগে বদনাম বা কোন সমস্যায় পড়তে চাইনা। কর্তৃপক্ষ না বুঝলে আমার করার কিছুই নাই।
সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন বলেন, পৌর পরিষদকে অনেকবার বলেছি রাস্তার ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি দিতে। কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। তাই চলতি মাসের গোড়ার দিকে সড়কের বেহাল দশা নিয়ে পৌর পরিষদের সাথে উপজেলা প্রশাসনের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কারণ শহরবাসীর দুর্ভোগের দায় এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। চেষ্টা করছি দ্রুত এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়ার। জানতে পেরেছি দুই তিন মাসের মধ্যেই বড় রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হবে। সে পর্যন্ত সৈয়দপুরবাসীকে ধৈর্য্য ধরা ছাড়া বিকল্প নাই।
সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আক্তার জাহান বলেন, বরাদ্দের অভাবে রাস্তার বড় সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা এরইমধ্যে প্রায় তিন কোটি টাকার রাস্তার কাজ করেছি। বরাদ্দ সাপেক্ষে খুব শিগগিরই প্রধান প্রধান সড়ক সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।