আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে রেলওয়ের লোকোমাস্টার, ট্রেন চালক, গার্ড, টিটিইসহ রানিং স্টাফদের ৭৫ শতাংশ মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক দাবি করে তা স্পষ্টভাবে আদেশ জারি না করা হলে আগামী ২৮ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী রেলওয়ের কর্মীরা। আর এ দাবির বিষয়টি জানান দিতে বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিক্ষোভ কর্মসূচি ও কর্মবিরতি পালন করা হয়। এদিন বেলা ১১টা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্মীরা রাজশাহী রেলস্টেশনে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও কর্মবিরতি পালন করে।
আন্দোলনকারীরা জানান, সারা দেশে এমন প্রায় চার হাজার রানিং স্টাফ রয়েছেন। সকলেই একযোগে আন্দোলন করতে গেলে দাবি পুরণ করা হবে বলে দীর্ঘদিন ধরেই কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের প্রাপ্য অর্থ কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দিচ্ছেন না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে আরও বক্তব্য দেন- রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের পশ্চিমাঞ্চলীয় আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক বিএম শহিদুল আলম রানা, গার্ড কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন, টিটিই অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওয়ালীউল্লাহ বাবু, বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
বাংলাশে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, রানিং কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫% মাইলেজ মূল বেতনের সাথে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছর যাবত চলমান। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব-পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল, সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। যে কারণে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রনালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ে রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা প্রদানে আপত্তি জানায়। এরই প্রেক্ষিতে আমরা সরকারের রেলমন্ত্রী, রেল সচিব সহ রেল প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বহুবার বৈঠক করে আমাদের প্রাপ্যতার বিষয়ে আইনগত ভিত্তি, যুক্তি তুলে ধরেছি। তখন তারা আমাদের দাবীর যৌক্তিকতা অনুধাবন করে অর্থ মন্ত্রনালয়কে বারবার চিঠি দেন এবং আমাদের প্রাপ্যতার বিষয়ে আশ্বস্তও করেন।
এর পর গত ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রনালয়ের একটি চিঠির প্রেক্ষিতে ২০২২ সালে ১৩ এপ্রিল রানিং স্টাফদের স্বতঃস্ফূর্ত কর্ম বিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে করে দেওয়া হয়। তখন অর্থ মন্ত্রনালয় ২০২২ সালের ১০ এপ্রিলের চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেন এবং রেলমন্ত্রী কমলাপুর রেলস্টেশনে মিডিয়ার সামনে সমস্যাটি সমাধানের আশ্বাস দেন। তবে দেরিতে হলেও গত ১১ জুন রেল প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্ণধার মহাপরিচালকের অনুমোদন ক্রমে রেলওয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ে রানিং স্টাফদের পার্ট অব-পে ৭৫% মাইলেজ যোগে পেনশন ও আনুতোষিক বহাল রেখে রেলওয়ের কোড ও বিধি বিধানের আলোকে একটি আদেশ জারী করেন। কিন্তু রেলওয়ের এই আদেশের বিরুদ্ধে অর্থ মন্ত্রনালয়ের আইবাস কর্তৃপক্ষের গত ১৮ জুনের একটি অবজ্ঞাসূচক পত্রকে আমলে নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত রানিং স্টাফদের ৭৫% মাইলেজ যোগে পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে সকল রানিং স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।
এ বিষয় নিয়ে অর্থ মন্ত্রনালয়ের অসম্মতি তাদের ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল সর্বশেষ পত্রে প্রত্যাহার করা হলেও গত ১৮ জুন এর সংশ্লিষ্ট পত্রে পুনরায় বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করা দুরভিসন্ধিমূলক এবং সরকারের ভিতর লুকিয়ে থাকা একটি সরকার বিরোধী চক্রের শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করি।
তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শেষবারের মতো জানাচ্ছি, আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে আমাদের দাবি পুরণ করা না হলে ২৮ আগস্ট ১২ টা ০১ মিনিট থেকে সর্বস্তরের রানিং স্টাফগণ কর্মবিরতি পালন করবে। বিক্ষোভ পালন শেষে রাজশাহী রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহা-ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারের কাছে দাবি সম্মলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
পরে এ বিষয়ে রাজশাহী রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহা-ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মচারীদের আন্দোলন যৌক্তিক। ফলে তাদের দাবি সম্মলিত স্মারকলিপিটি আমার ঊদ্ধোতন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।