দূরত্বের বিবেচনায় খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় ৩৯ বছর আগে নির্মিত হয় সাব-জেলখানা। প্রায় সোয়া দুই একর জমিতে নির্মিত জেলখানাটি আজও চালু হয়নি। বর্তমানে তদারকির অভাবে উচ্চ প্রাচীর বেষ্টিত জেলখানা ভবনসহ সম্পত্তি নষ্ট হচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন সময় জেলখানা ভবনে সরকারি প্রতিষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তার কোনোটিই পরবর্তীতে বাস্তবায়ন হয়নি। ওই ভবন থেকে আয়ের সুযোগ থাকলেও রাজস্ব খাতে জমা পড়েনি কোনো টাকা। দেশে উপজেলা পর্যায় মাত্র ১৮টি আদালত রয়েছে। এর মধ্যে পাইকগাছায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালত রয়েছে। আদালত ভবনের পেছনেই অবস্থিত পাইকগাছা সাব-জেলাখানা। জানা গেছে, খুলনা জেলা সদর থেকে পাইকগাছার দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার এবং কয়রা সদরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। দুটি উপজেলার আদালত ও জেলখানার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে পাইকগাছা এবং কয়রা উপজেলায় আদালত স্থাপন করে সরকার। পরে পাইকগাছায় সাব-জেলখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জেলখানা স্থাপনের জন্য ১৯৮৪ সালের ২৯ মে পাইকগাছা সদরে বাতিখালী মৌজায় ২ দশমিক ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। অধিগ্রহণের পর প্রায় ১৩ বছর ধরে জেলখানার জন্য চারদিকে প্রাচীরসহ দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এতে ৩টি কোয়ার্টার, ৪টি বড় কক্ষ রয়েছে। তবে এই স্থাপনাসহ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। বিভিন্ন নথি সূত্রে জানা গেছে, জেলাখানার ভবনে কিশোর অপরাধীর জন্য সরকারি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ হিসেবে ২০০৩ সালে ১০ মে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে জায়গাটি হস্তান্তর করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০০৫ সালের ৫ জানুয়ারি এক স্মারকে এর দায়িত্ব গ্রহণ করে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। কিন্তু কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ বাস্তবে রূপ নেয়নি। এ ছাড়া জেলাখানার জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে শেখ রাসেল ট্রেনিং অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন সেন্টার ফর দ্যা ডেস্টিটিউট চিল্ড্রেন প্রকল্প প্রণয়ণের জন্য ২০১৩ সালের ৬ মে পরিচালক (প্রশাসন) বরাবর অর্থ প্রস্তাব চেয়ে পাঠায় উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। এদিকে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবে রূপ না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে ২০১২ সালের ২২ জুলাই পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে চিঠি পাঠায় সিনিয়র সহকারী কমিশনার (জেলা ম্যাজিস্ট্রেট)। এর জবাবে তৎকালীন ইউএনও ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর সাব-জেল চালু করার জন্য চিঠি পাঠান। কিন্তু আজও সেটা আলোর মুখ দেখেনি। সরেজমিনে জানা গেছে, পাইকগাছা সাব-জেলখানার সম্পদ, ভবনসহ সব কিছু ২০০৫ সাল থেকে দেখভাল করছে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়। জেলখানার জন্য নির্মিত ৩টি কোয়ার্টার, ৪টি বড় কক্ষে বিনা ভাড়ায় বসবাস করছে স্থানীয় আদালত ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের ১০-১২ জন কর্মচারী। জেলখানার ভবন ও সম্পদ থেকে সরকারের বছরে লাখ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা থাকলেও, রাজস্ব খাতে জমা হয়নি একটি টাকাও। অ্যাড. প্রশান্ত মন্ডল বলেন, জেলখানাটি চালু হলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি পুলিশের আসামি আনা-নেওয়ায় ঝুঁকি কমবে। পাইকগাছা সমাজসেবা কর্মকর্তা সরদার আলি আহসান বলেন, ২০০৫ সালে আমার কার্যালয় সাব-জেলখানাটি দেখাশোনার দায়িত্ব পায়। বর্তমানে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। প্রায় সংস্কার অযোগ্য। আমরা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এখনো কোনো অনুমোদন পাইনি। পাইকগাছা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, থানায় যোগদানের পরে শুনেছি এখানে একটি সাব-জেলখানা আছে। এটি যদি চালু করা যায়, তাহলে থানা ও কোর্ট পুলিশের আসামি আনা-নেওয়ার ভোগান্তি কমবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, দেশে উপজেলা পর্যায় মাত্র ১৮টি আদালত রয়েছে। সেদিক দিয়ে পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলাবাসী সৌভাগ্যবান। যেহেতু পাইকগাছায় সাব-জেলাখানা আছে, এটি বর্তমানে সমাজসেবা কার্যালয় দেখভাল করছে। এটি চালুকরা গেলে এই অঞ্চালের মানুষ খুব উপকার পাবে।