ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ফলে মানুষের জীবনধারায় ডিজিটাল সংযুক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বত্র ডিজিটাল সংযুক্তি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে বিটিআরসি অভাবনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে ডিজিটাল সংযুক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ৭০,০৬৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে। রোববার ঢাকায় বিটিআরসির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন পরবর্তী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ তথ্য জানান। বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ, ড. শাহজাহান মাহমুদ ও জহুরুল হক, বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান কমিশনাররা ও মহাপরিচালকরা অনুষ্ঠানে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ডিজিটাল সংযুক্তি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনার হাব হিসেবে নবনির্মিত টেলিযোাগাযোগ ভবনের উদ্বোধনের এ মাহেন্দ্র ক্ষণটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রার মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে উল্লেখ করে বলেন, বিটিআরসি প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পর নিজস্ব আইকনিক ভবনে প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তরিত হলো। ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি ডিজিটাল সংযুক্তি। ডিজিটাল বাংলাদেশের শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়ন ও আইটিইউ-এর সদস্যপদ অর্জন এবং টিঅ্যান্ডটি বোর্ড গঠন করার মধ্য দিয়ে জাতির পিতা ডিজিটাল সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করেন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর বপন করা বীজটি সযতেœ চারা গাছে রূপান্তর করেন। ২০০৯ সাল থেকে সাড়ে চৌদ্দ বছরে চারাগাছটি বিরাট এক মহিরুহে রূপান্তর লাভ করেছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার এ প্রবর্তক বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্বভার গ্রহণকালে বাংলাদেশের টেলিডেনসিটি ছিল ৩০ শতাংশ। বর্তমানে এ হার শতকরা ১০৫.৮১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে মোবাইল গ্রাহক ছিল ৪ কোটি ৪৭ লাখ, বর্তমানে তা ১৮ কোটি ৬১ লাখে অতিক্রম করেছে। ২০০৯ সালে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল মাত্র ৪০ লাখ, বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৯৪ লাখ। ২০০৯ সালে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইদথের ব্যবহার ছিল ১০ জিবিপিএস, বর্তমানে তা ৪৮৬৫ জিবিপিএস অতিক্রম করেছে। তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে এক এমবিপিএস ব্যান্ডউইদথের দাম ছিলে ২৭০০০/ টাকা যা একদেশ এক রেটের আওতায় বর্তমানে ৬০ টাকা মাত্র। ২০০৯ সালে টেলিযোগাযোগ খাত থেকে মোট রাজস্ব আয় ছিল ৩৬০৭ কোটি টাকা, বর্তমানে তা ৭০ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। ২০০৯ আন্তর্জাতিক ব্রডব্যান্ড ক্যাপসিটি ছিল ৪৫ জিবিপিএস বর্তমানে তা ছয় হাজার জিবিপিএস অতিক্রম করেছে। ২০০৯ সালে ফাইভার অপটিকেল নেটওয়ার্ক ছিল ১৪৮৭৬ কিলোমিটার বর্তমানে তা ১৬১৯৬৬ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ সালে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন ছিল শূন্য বর্তমানে চাহিদার শতকরা ৯৭ ভাগ দেশে স্থাপিত ১৫টি মোবাইল কারখানা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে শতকরা ৯৮ ভাগ এলাকা ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্কেও আওতায় এসেছে। ২০০৯ সালে থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক ছিল না। অনুষ্ঠানে বক্তারা আইকনিক এ ভবনটি ডিজিটাল সংযুক্তি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের মাইলফলক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তারা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এ দৃষ্টিনন্দন ভবনটির উদ্বোধন হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।