বাগেরহাটের শরণখোলায় বর্ষা মৌসুমে বসত বাড়ির আঙ্গিনায় এই প্রথম ক্লাইমেট কৃষি প্রযুক্তি টাওয়ার ও বস্তা পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন উফশী জাতের সবজি ও শসা চাষ করে কৃষক ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন মহারাজ মোল্লা। এ করনে তার চোখে মুখে এখন ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। নতুন এ পদ্ধতি দেখে এলাকার চাষিরা উৎসাহিত হচ্ছে। নতুন এ পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে আগামী বছরে চাষিরা এভাবে চাষাবাদ করবে বলে জানিয়েছেন।
শরণখোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাসিবুল ইসলাম মনি জানায় ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় টাওয়ার ও বস্তা পদ্ধতি ব্যবহার করে উদ্ভুদ্ধ করনের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজি ও শসার চাষ শুরু হয়েছে। চাষি মহারাজকে বস্তা, বীজ ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে।
উপজেলার উত্তর কদমতলা গ্রামের সফল চাষী মো: মহারাজ মোল্লার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বসত বাড়ির আঙ্গিনায় পতিত জমিতে প্রায় অর্ধশতাধিক বস্তায় মাটি ভরাট করে সারিবদ্ধ ভাবে রেখে লাউ, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, বরবটি, ধুন্দল, চালকুমড়া ও শসার বীজ রোপন করি। গাছ বাওয়ার জন্য নেট দিয়ে মাচা তৈরি করেন। যে মাচায় ঝুলছে বিভিন্ন চোখজুড়ানো সবজি। বসত বাড়ির ৩৩ শতক জমির পুকুর ছাড়া প্রায় ২৭/২৮ শতক জমিতে সবজি, ফলের বাগান ও পানের বরজ রয়েছে। সফল চাষি মহারাজ মোল্লা হাসি মুখে বলেন, কৃষি বিভাগের ১০ ধরনের বীজ, অর্থ সহযোগীতা ও পরামর্শে অনেক কষ্ট করে ক্ষেত তৈরি করেছি কিন্তু ফলন দেখে এখন সব কষ্ট ভুলে গেছি আমরা। আমাদের পরিবার এবং স্বজনদের চাহিদা মিটিয়ে বাকি সবজি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি। এ কাজে আমার ছেলে সাইফুল ও আমার স্ত্রী সাহেরা সহায়তা করেছে। তার বসত বাড়ির আঙ্গিনায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে পারিবারিক পুষ্টি বাগান রয়েছে। যেখানে বেগুন, পুইশাক, বাগআলু, ঢেড়শ, লেবুসহ বিভিন্ন সবজি ও ফলের চাষ করা হয়েছে। তিনি মাটির উত্তম স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে মানসম্মত ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
মহারাজ মোল্লার স্ত্রী সাহেরা বেগম বলেন, নারীরা সাধারণত মাঠে গিয়ে কাজ করতে সমস্যা সৃষ্টি হয় কিন্তু বাড়ির আঙ্গিনায় শাক-সবজি চাষাবাদের কাজ করা সহজ। এতে পারিবারিক চাহিদা পূরণসহ আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসে। এ সময় এলাকার চাষী নুরুল ইসলাম আকনসহ কয়েকজন চাষি জানায়, লাভজনক এ পদ্ধতিতে আগামী বর্ষা মৌসুমে সবজি চাষ করার উদ্যোগ নিব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার এ প্রতিনিধিকে জানান, ক্লাইমেট কৃষি প্রযুক্তি টাওয়ার ও বস্তা পদ্ধতিতে উফশী জাতের বিভিন্ন সবজি চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে অতি বৃষ্টির কারণে আটকে থাকা পানিতে ফসলের কোন ক্ষতি হয় না। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করে কৃষক দেখেছেন সফলতার মুখ। এই পদ্ধতি দেখে আশেপাশের কৃষক কৃষনীরা উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। আগামীতে কৃষকরা টাওয়ার ও বস্তা পদ্ধতিতে চাষাবাদ করবে বলে জানিয়েছে। কারণ সাধারণ ভাবে চাষাবাদ করা হলে অতি বৃষ্টির কারণে ক্ষেত পানিতে ডুবে যায়। যে কারণে ফসল উৎপাদন মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হয়। আগামী বর্ষা মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।