যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন, হত্যার ঘটনা এখন যেন কিছুই না। পণের টাকা জোগাতে না পেরে বাবার হাহাকার, অপমান-লাঞ্ছনা সইতে না পেরে মেয়ের আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। আইন দিয়েও রোধ করা যাচ্ছে না এ সামাজিক ব্যাধি। এ যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। কিছু প্রকাশ পেলেও বেশির ভাগই থেকে যাচ্ছে অন্তরালে। সমাজে যৌতুকের লেনদেন আগেও ছিল। এখনো আছে। তবে আগের তুলনায় যৌতুক বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো মানুষের যেমন আয় বেড়েছে, তেমনি চাহিদাও বেড়েছে। এককথায় বিনাশ্রমে মেয়ের কাছ থেকে যতটুকু উশুল করে নেওয়া যায়। আর দিন দিন আমাদের মানসিকতা নিচের দিকে যাচ্ছে, আমরা সংকীর্ণমনা হয়ে পড়ছি। বাংলাদেশের যৌতুক প্রথার ওপর পরিচালিত ইউএনডিপির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ বিবাহিত নারী যৌতুকের কারণে শারীরিক অথবা মানসিক নির্যাতনের শিকার। যৌতুক আদায় করতে স্বামীরা নানা উপায় অবলম্বন করছেন। কেউ স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করছেন, কেউবা করছেন মানসিক নির্যাতন। আর না পেলেই তাঁকে মেরে ফেলা হচ্ছে। সরকার যৌতুক নিরোধের আইন করলেও যৌতুক দেওয়া-নেওয়া, একটা স্বাভাবিক রীতি হিসেবে এখনো পরিচিত। যৌতুক যেন একটি সামাজিক ‘স্ট্যাটাস’। বিয়েতে মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলেকে ‘কী’ দিল, এটা একটা অন্যতম আলোচনার বিষয়। তবে যৌতুক বাড়ার মূল কারণ নারীদের প্রতি পরিবার বা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা শিক্ষায়, প্রযুক্তিতে আধুনিক হচ্ছি, কিন্তু মন-মানসিকতায় সেই বর্বর মধ্যযুগেই বাস করছি। না হয় এখনো যৌতুকপ্রথা কেন থাকবে! আগের তুলনায় এখন যৌতুক নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে কেবল পাল্টেছে ধরন। বিবেক, মানবিকতা, নৈতিকতার জায়গা থেকে আমরা ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছি। সামাজিক, মানবিক ও মূল্যবোধের এ বিপর্যয়ের কারণে যৌতুক প্রথার লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। নারীর শত আবেগ, ভালোবাসা, স্নেহ, প্রেম অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে নির্মম পাশবিকতার কাছে। সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও যৌতুক প্রথা বন্ধ হয়নি। বিদ্যমান আইনগুলোর কার্যকর প্রয়োগ ও সময়োপযোগী নতুন আইন প্রণয়ন এবং জনসচেতনতার অভাবে। তাই যৌতুক প্রতিরোধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। বাড়াতে হবে যৌতুকবিরোধী প্রচারণা।সবাই সচেতন ও যৌতুকবিহীন বিয়েতে উৎসাহী হলেই এ প্রথাকে সমূলে উৎপাটন করা যাবে।