বেনাপোল স্থলবন্দরের ওয়েব্রিজের ওজন স্লিপ জালিয়াতির ঘটনায় পাঁচ কর্মকর্তাসহ ৬ জনকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের গঠিত ৫ সদস্যর তদন্ত টিমের সুপারিশের ভিত্তিতে এ বদলি করা হয়। এ ছাড়া কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৮জন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে শনাক্ত করেছে।
তবে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব ফাকির অভিযোগে রিয়াদ এজেন্সি, সোনালী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও রহমত ইন্টারন্যাশনাল নামে ৩টি লাইসেন্স বাতিল করেছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপসচিব আতিকুর রহমানের সই করা এক অফিস আদেশে তাদের বিভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছে। এরমধ্যে দুজন উপণ্ডপরিচালককে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বদলি করা বেনাপোল বন্দরের কর্মকর্তারা হলেন, উপণ্ডপরিচালক (ট্রাফিক) মনিরুল ইসলাম, উপণ্ডপরিচালক (প্রশাসন) রেজাউল করিম, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) রাশেদুল নজিব নাজির, সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) সাইফুর রহমান ভুঁইয়া, ট্রাফিক পরিদর্শক রোকনুজ্জামান আবেদীন ও অফিস সহায়ক রবিউল ইসলাম।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে আমদানি করা বিভিন্ন পন্য চালানগুলো বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের আগে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়েব্রিজ স্কেলে ট্রাকসহ পণ্যের গ্রোস ওজন নিশ্চিত করা হয়।
পণ্য আনলোড হওয়ার পর আবার খালি ট্রাক ওজন করে পণ্যের ওজন নিশ্চিত করে ওজন স্লিপ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। স্কেলের দায়িত্বে থাকা বন্দরের ২ জন কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে পন্যের ২ রকম ওজন সরবরাহ করতো কাস্টমস কতৃপক্ষকে।বন্দর কতৃপক্ষের দেওয়া ওজন স্লিপের ওজন কমিয়ে ডুপ্লিকেট ওজন স্লিপ সংযুক্ত করে পণ্য খালাস নেয়া হতো।
ওজন স্লিপ কমানোর কারণে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।বিষয়টি নিয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউজের ডেপুটি কমিশনার তানভীর আহম্মেদ সই করা একটি পত্র বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালককে প্রেরন করা হয়।
কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ ওজন স্লিপের সত্যতা যাচাই না করে ওই পত্রের বিপরীতে কাস্টমস কমিশনার বরাবর অপর একটি সাধারন পত্র দেয়। যা কাস্টমস এর পত্রের চাহিদার সাথে কোন মিল নয়। বন্দর কতৃপক্ষের ওজন জালিয়াতির বিষয়ে কাস্টমসকে কোন সহযোগীতা করেনি তারা। ফলে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ফাঁকি রোধ করতে সমস্যায় পড়ে কাস্টমস কতৃপক্ষ।
কাস্টমস কমিশনার আবদুল হাকিম ওজন শ্লিপ জালিয়াতির বিষয়টি অবহিত করে পত্র দেন বন্দরের চেয়ারম্যান, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন দপ্তরে। পত্র দেয়ার পর একটি বন্দরের উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) আবদুল জলিলের সই করা কাস্টমসে দেওয়া পত্রে বলা হয়, বেনাপোল স্থলবন্দরের ওয়েব্রিজ নম্বর ৪ ও ৫ এ কাস্টম হাউস, ওয়েব্রিজ স্কেলে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা স্ব-শরীরে উপস্থিতি থাকলে ভারতীয় সব ট্রাকের ওজন স্লিপে সই করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য স্থলবন্দরের ওয়েব্রিজ সমূহের প্রতিটি পণ্যচালানের ওজন স্লিপে স্থলবন্দরের প্রতিনিধির সই সম্পাদিত হয়। বেনাপোল স্থলবন্দরের অটোমেশন কার্যক্রম সফটওয়্যারের আপগ্রেডেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন বলেন, কয়েক মাস ধরে বেনাপোলের কয়েকটি সিএন্ডএফ এজেন্ট বন্দরের দেওয়া ওজন স্লিপে নকল ওজন স্লিপ সংযুক্ত করে পণ্যের ওজন কম দেখিয়ে পন্য খ্লাাস করেছে। এই ধরনের ৭-৮টি প্রতিষ্ঠান আমরা শনাক্ত করেছি। যাদের কাছ থেকে ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব আদায় করা হয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) আবদুল জলিল জানান, আমাদের পাঁচ কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহায়ককে প্রধান কার্যালয় বদলি করেছে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে বদলি করা কর্মকর্তারা ওজন স্কেলের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। পণ্য পরীক্ষণের সময় তো কাস্টমস কর্মকর্তারা ডিজিটাল স্কেলে ওজন করে ওজন নিশ্চিত করে থাকেন বলে তিনি জানান।