গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ১৯৭ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ দুই হাজার ১৯১ জনে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮৫ জনে। এটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুহার। এর আগে ২০২২ সালে সর্বোচ্চ ২৮১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশে ২০০০ সালের পর ২০১৯ সালে ডেঙ্গু প্রথম ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল। ক্ষুদ্র এডিস মশাবাহিত এ রোগটি প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও আগস্টে দৈনিক গড়ে আড়াই হাজারের বেশি রোগী ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর ৬৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ শতাংশ নারী। তবে নারী মৃত্যুহার ৫৭ শতাংশ ও পুরুষ মৃত্যুহার ৪৩ শতাংশ। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন। ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা ডিম, লার্ভা, পিউপা ও পূর্ণাঙ্গ দশা, এ চার ধাপে তার জীবনচক্র সম্পন্ন করে। পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী মশা পানির উপরিভাগে ডিম পাড়ে। পানিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভার জন্ম হয়। লার্ভাগুলো শৈবাল ও জৈব পদার্থ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং চারদিনের মধ্যে পিউপা দশায় উপনীত হয়। পিউপাগুলো পানিতে থাকে তবে কোনো খাদ্য গ্রহণ করে না। দুইদিন পর পিউপা পূর্ণাঙ্গ মশায় পরিণত হয়। অতীতে দেখা গেছে ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সমন্বিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না এডিস মশা। অন্যান্য রোগের মতো ডেঙ্গুর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হয় উপসর্গভিত্তিক। ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণের নতুন কোনো পদ্ধতিও আবিষ্কৃত হয়নি। অদ্যাবধি বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রধান পদ্ধতি হচ্ছে মশা নিয়ন্ত্রণ। এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে অবশ্যই স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে। বিভিন্ন দেশে এডিসবাহিত রোগ প্রতিরোধে কিছু বায়োলজিক্যাল পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বিটিআই (ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস)। এটি এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যা মশার লার্ভাকে মেরে ফেলতে পারে। দেশের বিভিন্ন নদ নালা ডোবা পুকুরে এই বিটিআই প্রয়োগ করতে হবে। এডিস মশা দমনে জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বাসা বাড়িতে এবং আশপাশে বদ্ধ বা জমানো পানির পাত্র দু-এক দিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে। ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোল, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। মশার কয়েল বা স্প্রে বা মশারোধী ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে হবে। দিনে ও রাতে ঘুমালে অবশ্যই মশারি টানিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে। শরীর কাপড় দিয়ে যথাসম্ভব ঢেকে রাখতে হবে। সর্বোপরি বলা যায় সরকারের সাথে জনগণের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার মাধ্যমেই শুধু এডিস মশা, তথা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।