মোবাইলের বাজারে চলছে ক্রেতার সংকট। এতে হুমকির মুখে পড়েছে মেড ইন বাংলাদেশের উদ্যোগ। মোবাইল ফোনের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মন্দা চলার কারণে কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করে, ডাবল শিফট কমিয়ে একটা শিফট চালু রেখে, লাইন সংখ্যা কমিয়ে, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন চালু রেখে (বাকি দিনগুলো বন্ধ রেখে) ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে কারখানা টিকিয়ে রেখেছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় পুরো কারখানা বন্ধ করা ছাড়া উৎপাদকদের সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। দেশীয় কারখানাগুলোতে এভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে খাতটির বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিতে পড়া, বাজারে ‘অবৈধ ফোনে’ সয়লাভ হয়ে যাওয়া, সরকারের রাজস্ব হারানোসহ এ খাতে বিপর্যয় তৈরি হতে পারে। দেশে কারখানা করা উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডগুলো হলো স্যামসাং, আইটেল-ট্র্যানসান, নোকিয়া, শাওমি, সিম্ফনি, ফাইভস্টার, লাভা (বর্তমানে বেনকো), উইনস্টার, ভিভো, অপো, রিয়েলমি, ওয়ালটন, লিনেক্স, আরএফএল, মাইসেল, ডিটিসি। বর্তমানে মোবাইল ফোন সংযোজনে গুরুত্বপূর্ণ দুটি যন্ত্রাংশ আমদানির পরও কাস্টমস হতে তা ছাড় করতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে উৎপাদিত টু-জি মোবাইল ফোন উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৬৯ হাজার আর ফোর-জি মোবাইল ফোন ৪ লাখ ৬২ হাজার, মার্চ মাসে টু-জি ছিল ১১ লাখ ৭৭ হাজার ইউনিট আর ফোর-জি ৫ লাখ ৭০ হাজার, এপ্রিল মাসে ছিল টু-জি ৮ লাখ ৮ হাজার আর ফোর-জি ৬ লাখ ৬৮ হাজার, মে মাসে টু-জি ৪ লাখ ৯৩ হাজার আর ফোর-জি ৩ লাখ ৭৮ হাজার, জুন মাসে টু-জি ৮ লাখ ৪৯ হাজার আর ফোর-জি ৬ লাখ ৩৯ হাজার ইউনিট। দেখা যাচ্ছে, এক বছরের ব্যবধানে দেশে টু-জি মোবাইল ফোনের উৎপাদন কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। ফোর-জি ফোনের উৎপাদনও কমেছে দুই লাখ ইউনিটের বেশি। মূলত চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর থেকে মোবাইল বাজারে আরও ধস নামে। যদিও ডলার সংকট, জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়া এবং মোবাইলের চিপ সংকটের কারণে এমনিতেই মোবাইল ফোন খাতে দীর্ঘদিন ধরে মন্দা চলছে। তাই এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার এবং যে সব কারণে ধস নামতে শুরু করেছে সে সব বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে উত্তরনের পথ বের করা খুবই প্রয়োজন।