মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অডিও/ভিডিও ফোন কল বা বার্তা লেনদেনের একটি অ্যাপ ইমো। ২০০৫ সালে তৈরি হওয়া ইমোর সারা বিশ্বে ৫০ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছে। ইমো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি পেজবাইটস ইনকরপোরেশনের মালিকানাধীন একটি কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম। এই অ্যাপ ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনও প্রান্তে অডিও-ভিডিও কল করা যায়। ইমোর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হলো ধীরগতির ইন্টারনেটেও নিরবচ্ছিন্ন কথা বলা যায়। ফলে ইন্টারনেট খরচও কম হয়। অন্যান্য অ্যাপের তুলনায় ইমো প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডাটা সাশ্রয় করে থাকে। বিশেষ করে প্রবাসীদের কাছে অ্যাপটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বিদেশ থেকে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে এখন ফোনের ব্যবহার কমে গেছে। প্রবাসীরা পরিবার বা স্বজনের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইমোতে কথা বলেন বেশি। তাই প্রতারক চক্র ইমো ব্যবহারকারী প্রবাসীদের টার্গেট করছে। যে কারণে প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি হ্যাকিং ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইমো হ্যাক করা কঠিন। কারণ এই অ্যাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ জোরালো। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ বা সিগন্যালের তুলনায় এর বেশ কিছু দুর্বলতা রয়েছে। ’ইমোর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, এটি একই সঙ্গে অনেকগুলো ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়। ফলে হ্যাকাররা কাউকে টার্গেট করলে, কৌশলে ওটিপি নিয়ে নিজেদের কোন ডিভাইসে ইমোর অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারে।‘’ যারা ইমো ব্যবহার করে, তারা এর সহজে ব্যবহারের দিকটার জন্যই পছন্দ করেন, কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তার দিকে ততোটা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবেন না। ইমো লগইন করতে গিয়ে টার্গেট ব্যক্তির কাছে ওটিপি চলে যায়। নানাভাবে ফুসলিয়ে সেই কোডটি নিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। এভাবে তারা ইমো একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। যখনি ডিভাইসে ইমোর অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, তখন তার সঙ্গে সংযুক্ত অসংখ্য মোবাইল নম্বরও দেখাতে শুরু করে ইমো। সেখান থেকে আত্মীয়-স্বজনের নাম্বারও জোগাড় করে হ্যাকার চক্র। বাংলাদেশের কিছু অপরাধী চক্র এভাবে প্রতারণা বা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজকে অনেকটা পেশা হিসাবে নিয়েছে। এর আগে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা, ফেসবুক হ্যাকিং করে অর্থ আদায়ের মতো ইমো ঘিরেও একটি প্রতারণা চক্র গড়ে উঠেছে। তাই এসব প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে নিজের লোভকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখতে হবে। তাহলেই এ ধরনের প্রতারণা থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ বেশি কার্যকর। অ্যাকাউন্ট হ্যাক বা প্রতারণার শিকার হওয়া প্রতিরোধ করতে ব্যবহারকারীকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। তাহলে এই প্রতারক হ্যাকার চক্রকে দমন করা সম্ভব।