স্বর্ণ চোরাচালান অতীতেও ছিল, বর্তমানেও আছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকার পরেও থেমে নেই স্বর্ণ চোরাকারবারি চক্র। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে হযরত শাহজালাল, শাহ্্ আমানত ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে নিয়ে আসছে স্বর্ণের বড় বড় চালান। প্রায় প্রতিদিনই কিছু স্বর্ণ উদ্ধার হলেও স্বর্ণের বড় বড় চালান ধরা পড়ছে না। বরং এ চোরাচালানের পেছনে কে বা কারা রয়েছে তা শনাক্ত করা বেশ কঠিন। তাই হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এবং কাস্টমসের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশেই বিমানগুলোতে চলছে স্বর্ণ চোরাচালান। ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৫৭ মণ স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। জব্দকৃত স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রয়েছে। এর বাইরে আরো বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ চোরাই পথে দেশে এসেছে এবং প্রতিবেশী দেশে পাঁচার হয়েছে। স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দুই শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধভাবে আনা হচ্ছে এসব স্বর্ণ। অবৈধভাবে স্বর্ণ বহনকারীদের কেউ কেউ আটক হলেও নেপথ্যের গডফাদাররা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ উপায়ে স্বর্ণ আমদানি ও পাঁচার করায় সরকার শুধু কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, বৈদেশিক মুদ্রাও পাঁচার হয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক খাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালান চক্র প্রায় প্রতি সপ্তাহেই অবৈধভাবে স্বর্ণের বড় বড় চালান নিয়ে আসছে। তাই স্বর্ণ পাঁচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোরভাবে কাজ করতে হবে। বিমানের কিছু অসাধু কর্মী স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে তা কঠোরহস্তে দমন করতে হবে। জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া যাবে না। সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা সরকারের সব সংস্থাকে প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি। এ ক্ষেত্রে কাস্টমসের কর্মকর্তা, পুলিশ বিমানকর্মীসহ সবাইকে আরও কঠোর হতে হবে। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় কমানো সম্ভব হবে।